ট্রাম্পের চাপ সত্ত্বেও রুশ তেল কিনে বিপুল লাভ ভারতের, পরিসংখ্যানে চমক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও এই আমদানি বন্ধ হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ০৮:৫০: ভারতের জন্য এখন রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল (crude oil) হয়ে উঠেছে এক বিশাল লাভজনক ব্যবসা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও এই আমদানি বন্ধ হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ হলো, গত ৩৯ মাসে সস্তায় রুশ তেল কিনে ভারত বিশাল অঙ্কের টাকা লাভ করেছে।
এই সময়ে ভারত যেভাবে লাভবান হয়েছে, তার পরিসংখ্যান চমকে দেওয়ার মতো।
গত সাড়ে তিন বছরে রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল আমদানি করে অন্তত ১২৬০ কোটি ডলার সাশ্রয় করেছে ভারত। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ কোটি ১১ লক্ষ টাকারও বেশি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত সরকারি তথ্য উদ্ধৃত একটি প্রতিবেদনে এই চমকপ্রদ পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর পরেই আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলি রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর মধ্যে মার্কিন প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখার ‘শাস্তি’ হিসাবে। তবু রুশ তেল আমদানি বন্ধ করেনি ভারত। বরং সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে।
গত ৩৯ মাসে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করে ভারত মোট ১২৬০ কোটি ডলার সাশ্রয় করেছে।
- ২০২২–২৩ অর্থবর্ষে: রাশিয়ার তেল আমদানি করে সাশ্রয় হয় ৪৮৭ কোটি ডলার
- ২০২৩–২৪ অর্থবর্ষে: সাশ্রয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪১ কোটি ডলার
- ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে: ছাড় কমে ২.৮ শতাংশে, সাশ্রয় হয় মাত্র ১৪৫ কোটি ডলার
- ২০২৫–২৬ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে: সাশ্রয় হয়েছে ৮৪ কোটি ডলার
তবে CLSA-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, রুশ তেলের উপর বর্তমান ছাড় নয়াদিল্লির কাছে ততটা লাভজনক নয়। প্রতি ব্যারেলে গড় ছাড় ২০২৩-২৪ সালে ছিল ৮.৫ ডলার, যা বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ ডলারে। বিমা, শিপিং এবং রিস্ক প্রিমিয়ামের মতো অতিরিক্ত খরচের কারণে ভারতীয় শোধনাগারগুলির লাভের পরিমাণও কমেছে।
২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ পৌঁছেছে ৬৮০০ কোটি ডলারে (প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা)।
- ভারত থেকে রাশিয়ায় রপ্তানি: ৪৯০ কোটি ডলার
- রাশিয়া থেকে আমদানি: ৬৩০০ কোটি ডলার
এর মধ্যে অশোধিত তেল ও সামরিক সরঞ্জামই প্রধান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্য ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির তুলনায় রাশিয়া সস্তায় তেল সরবরাহ করছে, যা ভারতের অর্থনীতির জন্য সহায়ক। তবে পশ্চিমি দেশগুলির চোখে এই পদক্ষেপ বিতর্কিত। তবু নয়াদিল্লি-মস্কো সম্পর্কে ছেদ পড়ার কোনও ইঙ্গিত নেই।
রাশিয়ার তেল আমদানি আগস্ট থেকে আবার বাড়তে শুরু করেছে। যদিও ছাড়ের পরিমাণ কম, তবু ভারতীয় শোধনাগারগুলি রুশ তেলকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করছে। কূটনৈতিক চাপ ও অর্থনৈতিক লাভের টানাপোড়েনের মাঝেও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।