কেন্দ্রীয় কৃষি নীতির ক্ষতে প্রলেপ দিতেই কি এবার সিঙ্গুরে কৃষকদের কর্মসূচীকে সমর্থন বিজেপির? জল্পনা

হুগলির কৃষিবলয় বিশেষত সিঙ্গুর তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার কৃষকের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া জরুরি হয়েছে। নজরে থাকছে আগামী লোকসভা ভোট। হুগলিতে তাদের সবেধন নীলমণি সাংসদের এলাকার মধ্যে পড়ে সিঙ্গুর বিধানসভা।

December 13, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষকবিরোধী নীতির দায় কাঁধে নিয়ে সিঙ্গুরে ‘নাক খত’ যাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্ব। নামে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি হলেও দেশের কৃষক আন্দোলনের ঐতিহাসিক মাটিকে ব্যবহার করাই তাদের লক্ষ্য। যে কারণে রাজ্যের কিষান মোর্চার কর্মসূচির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে সিঙ্গুরকে। রাজনৈতিক মহলের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার সদ্য কৃষক বিরোধী কৃষিনীতি প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওই কৃষিনীতি নিয়েই প্রচারে নেমেছিল বিজেপি। হুগলির কৃষিবলয় বিশেষত সিঙ্গুর তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার কৃষকের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া জরুরি হয়েছে। নজরে থাকছে আগামী লোকসভা ভোট। হুগলিতে তাদের সবেধন নীলমণি সাংসদের এলাকার মধ্যে পড়ে সিঙ্গুর বিধানসভা।

বিজেপি’র এই উদ্যোগকে ইতিমধ্যেই কটাক্ষ করেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তারা বলছে, কোনও কোনও অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত হয় না। তৃণমূলের সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্য‌‌তম নেতা রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, সিঙ্গুরের মানুষ আন্দোলন কাকে বলে তা দেখেছে। ফলও পেয়েছে হাতেনাতে। এখনকার কৃষক বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা করে না। বিধানসভা ভোটেই তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। ফলে বিজেপি’র ছলচাতুরি আর লোক দেখানো কান্নায় সিঙ্গুরের মাটি ভিজবে না। কিষান মোর্চার রাজ্য সহ সভাপতি অলোক সরকার বলেন, কোনও সন্দেহ নেই সিঙ্গুরের কৃষক আন্দোলন ইতিহাস তৈরি করেছে। রাজ্যজুড়ে কৃষক বঞ্চনার প্রতিবাদ এখান থেকেই হওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় কৃষিআইন নিয়ে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। বৃহৎ অংশের কৃষককে আমরা দুঃখ দিয়েছি। কিন্তু আমরা কৃষকের পক্ষে।

আলুচাষিদের ক্ষতিপূরণ, চন্দ্রকোণায় কৃষকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ সহ প্রায় দশ দফা দাবিতে কিষান মোর্চা মঙ্গলবার থেকে তিনদিনের আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েছে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন সিঙ্গুরের গোপালনগরে মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু হয়েছে। যদিও ওই জায়গাটি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বলে দাবি করে সেখানে মঞ্চ বাঁধা নিয়ে আপত্তি তুলেছে হুগলি গ্রামীণ পুলিস। কিষান মোর্চা সেখানে বিজেপি’র প্রথম সারির নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বলা বাহুল্য, ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য সিঙ্গুরের মাটিকে তারা নির্বাচন করায় রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। কিষান মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার বিতর্কিত কৃষিআইন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরে। অর্থাৎ যে কৃষিআইন নিয়ে গোটা দেশে বিক্ষোভ দানা বেঁধেছিল, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভুল স্বীকার করতেই এবার কৃষক ভজনায় নামতে চাইছে গেরুয়া শিবির। আর ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্য সঙ্গত কারণেই বাছা হয়েছে সিঙ্গুরকে। দেশজোড়া উত্তাল কৃষক বিক্ষোভের মধ্যেই একদা সিঙ্গুর আন্দোলনের নেতা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে তৃণমূল থেকে ভাঙিয়ে এনে প্রার্থী করেছিল বিজেপি।

কিন্তু সিঙ্গুরের কৃষক সমাজ তাঁর কৃষকবিরোধী দলে যাওয়াকে বরদাস্ত করেনি। বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে হারতে হয় রবীন্দ্রনাথবাবুকে। এমনকী, হুগলির বিস্তীর্ণ কৃষিবলয়ে বিধানসভা ভোটে দাঁড়াতেই পারেনি গেরুয়া শিবির। আরামবাগে দল জয় পেলেও সেখানে শাসকদলের সমস্যাই মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল। কৃষকরা তৃণমূল কংগ্রেসের পাশেই ছিল। এই অবস্থায় তাই কৃষকদের নাম করে সিঙ্গুরের আন্দোলন ভূমিতে ‘মাথা ঠুকতে’ যাচ্ছে বিজেপি। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen