কালীগঞ্জের ফলাফল বুঝিয়ে দিল- মেরুকরণ নয়, উন্নয়নের উপর ভিত্তি করেই ২০২৬-এ ভোট হবে

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ০৯:০০: ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে লড়ার প্রস্তুতি হিসেবে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বছরের শুরুতেই টানা ১০ দিন বাংলায় ছিলেন। আরএসএসের সমস্ত শাখা সংগঠনকে সক্রিয় করে নির্বাচনে লড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই পাল্টে যায় বিজেপির স্লোগান। হিন্দু ভোট ঐক্যবদ্ধ করার ডাক দেওয়া হয়। এমনকী, সংখ্যালঘু এলায় বুথ কমিটি গড়ার দরকার নেই, এমনও নিদান আসে। স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়, হিন্দু এলাকাগুলিতেই বাড়তি জোর দিতে হবে। শাসক দলের ৫ থেকে ১০ শতাংশ হিন্দু ভোট ছিনিয়ে আনতে পারলেই ২০২৬-এ কেল্লা ফতে! সেইমতো কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে রাজ্যজুড়ে স্লোগান ওঠে, ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই’।
কিন্তু সোমবার কালীগঞ্জে উপনির্বাচনের ফলাফলে স্পষ্ট যে, ধর্ম দেখে ভোটাররা ভোট দেননি। প্রত্যাশামতোই উড়ল সবুজ আবির। গত লোকসভা ও বিধানসভার ভোটের ভোটব্যাঙ্ক খোয়াল বিজেপি। ভোট শতাংশ বাড়িয়েও জামানত জব্দ বাম-কং জোটের প্রার্থীর। এই ভোটবাক্সের ফল শুধুমাত্র জয়-পরাজয়ের দিক থেকে নয়, বিধানসভা নির্বাচনের ন্যারেটিভ তৈরির ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাদের দাবি, এবারের নির্বাচনে স্পষ্ট, মেরুকরণের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে বাংলার মানুষ। উন্নয়নেই আস্থা তাদের।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে তাদের মেরুকরণের রাজনীতি আদৌ সফল হবে কি না, স্বভাবতই তা নিয়ে বিজেপি’র অন্দরে সংশয় তৈরি হয়েছে। দলের অপর অংশের দাবি, এই ফলাফল বিজেপির নেতাদের ফের একবার বুঝিয়ে দিল, সম্প্রীতির ঐতিহ্যেই আস্থা রাখছে বাংলা। তার উপর রয়েছে, রাজ্য বিজেপির বিভিন্ন গোষ্ঠীর লড়াই। এক গোষ্ঠী ভোটে লড়াই দিলে আর-এক গোষ্ঠী বসে যায়। সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষসহ বিভিন্ন নেতা ও অনুগামী আভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে ব্যস্ত। হঠাৎ বিয়ে, তারপর দীঘার জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর দিলীপ ঘোষ কার্যত বিজেপির ভরকেন্দ্র থেকে ছিটকে গিয়েছেন। কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে তাঁকে দেখাই যায়নি! বিরোধী দলনেতা কিংবা রাজ্য সভাপতি প্রচার শেষের আগের দিন নমো নমো করে প্রচার সেরেছেন। সব মিলিয়ে ভোটযুদ্ধে নামার আগেই মানসিকভাবে পিছিয়ে ছিল বিজেপি। ফল প্রকাশের পর তাই দলীয় লাইন তথা ভিরতকার দ্বন্দ্ব সবটাই বেআব্রু হয়ে পড়েছে।