লাদাখ সফর স্থগিত প্রতিরক্ষামন্ত্রীর, উঠছে প্রশ্ন

মূলত চিনকে আরও কিছুটা সময় দিতেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী সফর স্থগিত করেছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

July 3, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

আজ, শুক্রবার লাদাখ সফরে যাওয়ার কথা ছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর। সঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল সেনাপ্রধানেরও। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে সফর স্থগিত করে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, সফরের নতুন দিন ঠিক হলে জানিয়ে দেওয়া হবে। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত অবশ্য আজ লেহ-তে যাচ্ছেন। কোর কম্যান্ডার ও অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।

শেষ মুহূর্তে রাজনাথের সফর স্থগিতের নেপথ্যে নয়াদিল্লির কৌশল দেখছে ওয়াকিবহাল মহল। তাদের বক্তব্য, দুই বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্তরের আলোচনায় বড় ধরনের সাফল্য মেলেনি সে কথা ঠিক, কিন্তু, পরিস্থিতির নতুন করে অবনতিও হয়নি। পূর্ব লাদাখে এখন অনেকটাই স্থিতাবস্থা রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রী যদি লাদাখের ফরোয়ার্ড পোস্টগুলিতে যান, সেক্ষেত্রে নতুন করে দু’দেশের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ বেধে যেতে পারে। আলোচনা থেকে পিছু হঠার নতুন অজুহাত চলে যেতে পারে লাল ফৌজের হাতে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যা একেবারেই কাম্য নয়। মূলত চিনকে আরও কিছুটা সময় দিতেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী সফর স্থগিত করেছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যে সম্ভাবনা আরও জোরাল হয়েছে এদিন বিদেশ সচিব অনুরাগ শ্রীবাস্তবের কথায়। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের আশা, দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা মেনে সীমান্তে শান্তি ফেরানোর যাবতীয় উদ্যোগ চিন নেবে।’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং চিত্র সৌজন্যেঃ- PTI

পর্যবেক্ষকদের এক অংশ আবার এই সফর স্থগিতের অন্য ব্যাখ্যাও খুঁজে পেয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, গলওয়ানে চিনা সেনার সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে পূর্ব লাদাখে চিনা অনুপ্রবেশের দাবি পুরোপুরি ভাবে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে জানিয়েছেন, ভারতীয় ভূখণ্ডের কোনও অংশে চিনা অনুপ্রবেশ হয়নি৷ এমন অবস্থায় রাজনাথ সিং লাদাখে গেলে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে পারে, কোনও সমস্যা না থাকলে বার বার কেন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে লাদাখে ছুটে যেতে হচ্ছে? সম্ভবত সেটা আঁচ করেই পরিকল্পনা বদল করে কেন্দ্র।

তবে, সফর স্থগিত করলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সামরিক শক্তিবৃদ্ধিতে খামতি রাখতে চাইছে না নয়াদিল্লি। বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ২১টি ‘মিগ-২৯’ এবং ১২টি ‘সুখোই- ৩০’ যুদ্ধবিমান কিনবে দেশ। রাশিয়া থেকে কেনা হবে সুখোই আর মিগ নির্মাণের বরাত দেওয়া হবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যালকে৷ পাশাপাশি চলবে ৫৯টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের আধুনিকীকরণের কাজও। এই দায়িত্ব হ্যালকেই দেওয়া হচ্ছে। সরকারি সূত্রের দাবি, ২১টি মিগ কিনতে এবং ৫৯টি মিগের আধুনিকীকরণ করতে খরচ হবে আনুমানিক ৭,৪১৮ কোটি টাকা৷ সূত্রের খবর, এই বৈঠকে ‘পিনাকা’ এবং ‘অ্যাসট্রা’ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে খরচ হবে ৩১,১৩০ কোটি টাকা৷

এ সবের মধ্যে প্রশ্ন একটাই সীমান্তে এই অচলাবস্থা কতদিন চলবে?

স্পষ্ট উত্তর কারও কাছে নেই। বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, পূর্ব লাদাখের বর্তমান অচলাবস্থার কারণ, ভারতীয় সেনার টহলদারি নিয়ে চিনের আপত্তি। প্যাংগং লেকের ফিঙ্গার ৪ থেকে ফিঙ্গার ৮ পর্যন্ত এলাকায় ভারতীয় সেনাকে টহলদারি করতে দিতে নারাজ লাল ফৌজ। অথচ, এটা ভারতেরই এলাকা এবং দরবুক থেকে দৌলত বেগ ওল্ডি পর্যন্ত তৈরি রাস্তার উপরে নজর রাখতে হলে এই টহলদারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক সূত্রের দাবি, গলওয়ানে সংঘাতের পর থেকে এই এলাকায় টহলদারি শুরু করা যায়নি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen