নারী ক্ষমতায়নে অগ্রণী মমতা, দেশে মহিলা সংরক্ষণ আইনের বাস্তবায়নে উদাসীন কেন্দ্র!

November 12, 2025 | 3 min read
Published by: Ritam

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৬:২০: নারী সংরক্ষণ আইন এখনও বাস্তবে কার্যকর হয়নি, কিন্তু নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। তিনি শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, গোটা দেশকে দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়।

ভারতের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বহু প্রতিশ্রুতি ও আইনি অগ্রগতি ঘটেছে। ৩৩% আসন সংরক্ষণের বিধান আইনের পাতায় জায়গা পেলেও, বাস্তব প্রয়োগে এখনও তা অধরা। ফলে, নীতিনির্ধারণের স্তরে নারীদের উপস্থিতি আজও সীমিত, এবং সেই অভাব পূরণে কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে দেশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে, তা এই শূন্যতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নারীদের সামনে এগিয়ে আসার সাহস জুগিয়েছে।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকায় ৪১% মহিলা ছিলেন, যার মধ্যে ৪০ জন জয়ী হয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয়বারের সরকারে ৮ জন মহিলা মন্ত্রী শপথ নিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন পূর্ণমন্ত্রী শশী পাঁজা এবং স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রত্না দে নাগ, সন্ধ্যারানি টুডু প্রমুখ। এই প্রতিনিধিত্বকে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে নারী নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নারী কল্যাণে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর নেতৃত্বে রাজ্য সরকার নারীদের জন্য একাধিক সামাজিক ও আর্থিক সহায়তা প্রকল্প চালু করেছে- যার মধ্যে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী এবং লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বর্তমানে লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা সাংসদের সংখ্যা ১১ জন। ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর গঠিত ১৮তম লোকসভায় এই প্রতিনিধিত্ব এসেছে, যা নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দলটির অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে। এই মহিলা সাংসদদের মধ্যে রয়েছেন সাজদা আহমেদ (উলুবেড়িয়া), মালা রায় (কলকাতা দক্ষিণ), সায়নি ঘোষ (যাদবপুর), শতাব্দি রায় (বীরভূম), প্রতিমা মণ্ডল (জয়নগর), মহুয়া মৈত্র (কৃষ্ণনগর), কাকলি ঘোষ দস্তিদার (বারাসাত) প্রমুখ। দোলা সেন (Dola Sen) রাজ্যসভার সদস্য হলেও তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ মহিলা মুখ হিসেবে তিনিও উল্লেখযোগ্য।

অন্যদিকে মহিলা সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে কেন্দ্রের উদাসীনতা নিয়ে জোর চর্চা চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে। সংসদে নারীদের উপস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে- গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ মঞ্চে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব কি ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে? ২০২৩ সালে ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’ নামে পরিচিত সংবিধানের ১০৬তম সংশোধনী আইন পাস হয়, যার মাধ্যমে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভায় এক-তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়েছে।

কংগ্রেস নেত্রী জয়া ঠাকুর মহিলা সংরক্ষণ আইনের কিছু ধারা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। তাঁর যুক্তি, আইন পাস হলেও তা কার্যকর না হওয়ায় নারীদের রাজনৈতিক অধিকার এখনও সুরক্ষিত নয়। ফলে, সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি কেবল কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে, বাস্তবের মাটিতে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।

২০২৩ সালে সংসদে পাস হওয়া ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’ অনুযায়ী লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভায় ৩৩% আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে আইন পাস হলেও এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের একমাত্র মহিলা বিচারপতি বিভি নাগরত্ন (BV Nagarathna) এই আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা সমাজে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

আইনজীবী ঝুমা সেনের মতে, ‘‘সংরক্ষণের আইন মহিলাদের অধিকার, বাহবা নয়।’’ তিনি বিচারপতি নাগরত্নের পদক্ষেপকে কুর্নিশ জানিয়ে বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে সংরক্ষণের ফলে বাস্তব পরিবর্তন এসেছে, সংসদেও তা আশা করা যায়।’’ তবে তিনি সতর্ক করেন, ‘‘যদি এই সংরক্ষণ প্রতীকী হয়, তা হলে তা অর্থবহ পরিবর্তন আনবে না।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ঐশিকা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মেয়েরা সুযোগ পেলে দেশের কথা আরও গভীরভাবে বোঝেন। কিন্তু প্রক্সি রাজনীতির বাস্তবতাও অস্বীকার করা যায় না।’’ তাঁর মতে, ‘‘সংরক্ষণের পাশাপাশি নারীদের নিজস্ব কণ্ঠস্বর ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে।’’ মনোসামাজিক কর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘নারীদের উপস্থিতি শুধু সংখ্যা নয়, নীতিনির্ধারণের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গার্হস্থ্য হিংসা-সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আসবে।’’ তাঁর মতে, ‘‘এই সংরক্ষণ আইন ক্ষমতার সমবণ্টনের সূচনা হতে পারে।’’

পশ্চিমবঙ্গে নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের (TMC Govt) ভূমিকা একাধিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার স্থানীয় স্তরে পঞ্চায়েত ও পুরসভায় মহিলাদের জন্য ৫০% পর্যন্ত আসন সংরক্ষণ করেছে, যা দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্য। যদিও বিধানসভায় এখনো মহিলাদের জন্য আলাদা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই, দলীয়ভাবে মহিলা প্রার্থীদের মনোনয়ন ও নির্বাচনে অংশগ্রহণে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) বরাবরই অগ্রণী।

উল্লেখ্য, নারী ক্ষমতায়নের পথে পশ্চিমবঙ্গ ইতিমধ্যেই অনেকটা এগিয়েছে। তবে জাতীয় স্তরে সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নের অপেক্ষা এখনও দীর্ঘ। তাই বলা যায় “আজকে বাংলা যা ভাবে, আগামীকাল তাই ভাববে ভারত” (what bengal thinks today india thinks tomorrow) এই মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ আইন যদি বাস্তবায়িত হয়, তা হলে তা শুধু নারীদের নয়, গোটা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে, বাংলার মতোনই এক নতুন অধ্যায় সূচিত করবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen