দিল্লিতে বাঙালিদের হেনস্থার অভিযোগে সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার যেসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, বাংলা-বিরোধী অপচেষ্টাকে দেশের প্রান্তে শুরু করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:৫১: সম্প্রতি নয়াদিল্লির (New Delhi) বসন্ত কুঞ্জের যমুনা অ্যাপার্টমেন্টের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত জয় হিন্দ কলোনি, যেখানে বেশিরভাগ বাঙালির (Bengali) বাস। তারা সেখানে পরিচারিকা এবং স্যানিটেশন ওর্য়ার্কার হিসেবে কাজ করেন। ইদানিং তারা ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। হঠাৎ করেই তাদের জল সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। কারও কারও ইলেক্ট্রিকের লাইন ও কেটে দেওয়া হয়েছে, এককথায় তাদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আজ এই বিষয়ে সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন। “নয়াদিল্লির বসন্তকুঞ্জের জয় হিন্দ কলোনি থেকে উঠে আসা একের পর এক ভয়ঙ্কর হেনস্তার ঘটনার খবর শুনে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও বিচলিত। এই বসতি মূলত সেই বাংলাভাষী মানুষেরা তৈরি করেছেন, যাঁরা দিল্লিকে গঠন করার অসংগঠিত শ্রমশক্তির গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ।
শোনা যাচ্ছে, বিজেপি পরিচালিত সরকারের নির্দেশে তাঁদের জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিন কয়েক আগে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে এবং ইলেকট্রিসিটি মিটার তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা নিজেদের টাকায় যে প্রাইভেট জলের ট্যাঙ্কারের ব্যবস্থা করেছিলেন, তা দিল্লি পুলিশ এবং আরএএফ-এর সহায়তায় আটকে দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে একপ্রকার জবরদস্তি উচ্ছেদ চলছে, যদিও এই বিষয়ে গত ডিসেম্বরেও একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দিল্লি পুলিশের হস্তক্ষেপের পর আদালতে এই মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আশ্রয়, জল ও বিদ্যুৎ, এই মৌলিক অধিকারগুলো যদি এইভাবে পদদলিত করা হয়, তাহলে আমরা কীভাবে নিজেদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বলে দাবি করব?
পশ্চিমবঙ্গে ১.৫ কোটিরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিক (Migrant worker) রয়েছেন, যারা সম্মানের সঙ্গে বসবাস করেন। কিন্তু বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে সেই কথা জোরের সঙ্গে বলা যায় না, যেখানে বাংলাভাষীদের নিজের দেশেই অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেউ বাংলায় কথা বললে, তিনি বাংলাদেশি হয়ে যান না। ভাষা নির্বিশেষে তাঁরা ভারতেরই নাগরিক, যেকোনো ভারতীয় নাগরিকের মতোই সমান অধিকারসম্পন্ন।
পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার যেসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এবার সেই বাংলা-বিরোধী অপচেষ্টাকে দেশের অন্যান্য প্রান্তে শুরু করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। গুজরাট, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও মধ্যপ্রদেশ থেকেও বাংলাভাষীদের উপর নিপীড়ন করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এখন সেই বিদ্বেষের ছায়া এসে পড়েছে দেশের রাজধানীতেও।
এই দেশেই বাংলার মানুষ যদি অনাহূত অতিথির মতো আচরণের শিকার হন, তাহলে আমরা চুপ করে থাকব না। বাংলা সমস্ত নির্যাতিত কণ্ঠের পাশে দাঁড়াবে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা সর্বত্র আওয়াজ তুলব।”
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই এ বিষয়টি নিয়ে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছিলেন আরজেডি’র সাংসদ (RJD MP) মনোজ ঝাও (Manoj Jha)। তিনি তার পোস্টে লিখেছেন, সম্ভবত গত ডিসেম্বরে দিল্লি পুলিশ কিছু নথিপত্র যাচাই করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও জোর করে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে।