বিধায়ক করোনা আক্রান্ত, ৪৬ মিনিটে শেষ বিধানসভা অধিবেশন

এই দু’জনকে নিয়ে দু’দিনে মোট ১০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে বলে এই বিধানসভা সূত্রের খবর।

September 10, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

করোনা আতঙ্কের আবহে রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন স্বল্প সময়ের জন্য বসে অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবি হয়ে গেল। পরিষদীয় রাজনীতিতে এই নজির তৈরি হল বুধবার। কার্যত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই পৌনে এক ঘণ্টার এই অধিবেশন বসানোর আয়োজন করা হয়েছিল। প্রায় ছ’মাস আগে শেষ অধিবেশন বসায় বিধি মোতাবেক ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্তত একদিনের জন্য তা বসানোর প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। বিধায়ক থেকে শুরু করে বিধানসভার কর্মীসহ সকলের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই আপাতত অধিবেশনের কাজ বন্ধ রাখা হল। করোনা আতঙ্কের পরিবেশে বসানো এই নিয়মরক্ষার অধিবেশনের সাক্ষী থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ শাসক ও বিরোধী শিবিরের প্রায় পৌনে দুশো বিধায়ক। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারের মতো এদিনও বিধায়ক ও অন্যান্যদের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু রাখে স্বাস্থ্যদপ্তর। এদিন আরও প্রায় ২০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে তারা। তার মধ্যে সিপিএম থেকে তৃণমূলে যাওয়া জলঙ্গির বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক ও একজন পুলিস কর্মীর পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এই দু’জনকে নিয়ে দু’দিনে মোট ১০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে বলে এই বিধানসভা সূত্রের খবর।

এদিনের এই নিয়মরক্ষার অধিবেশনে প্রধান আলোচ্যসূচি ছিল শোকপ্রস্তাব পাঠ। করোনার বলি হওয়া বর্তমান ও প্রাক্তন বিধায়করা গুরুত্ব সহকারে এই প্রস্তাবে ঠাঁই পেয়েছেন। এছাড়া বিগত ছ’মাসে দেশ ও রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্টজনদের নামও ছিল সেই প্রস্তাবে। তবে পৃথকভাবে একটি বিশেষ শোকপ্রস্তাব আনা হয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করে। অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ম মেনে নিজেই দুটি প্রস্তাবই পাঠ করেন। বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে বিদ্যুৎ দপ্তরের দুটি সংস্থার বার্ষিক রিপোর্ট পেশ করেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। বিধানসভার স্থায়ী কমিটিগুলির মেয়াদ আরও কয়েক মাস বাড়ানোর বিষয়ে পৃথক প্রস্তাব পেশ করেন মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ। শোকপ্রস্তাবের মতোই বিনা বাধায় এসব কিছুই এদিন পাস হয়। যদিও পরে সাংবাদিক বৈঠকে এদিনও এভাবে ৪৬ মিনিটে অধিবেশন শেষ করে দেওয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছে বাম-কংগ্রেস শিবির। অন্যদিকে বিজেপি পরিষদীয় দল এদিন তাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু, উম-পুন ঝঞ্ঝার তহবিল লুট, আদিবাসী মহিলাদের উপর নির্যাতন বৃদ্ধি ইত্যাদি ইস্যুতে বিধানসভা চত্বরে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখায়।

আলোচ্য এই সব বিষয়ের থেকেও অবশ্য এদিন সদন কক্ষের ছবিটাই ছিল সকলের চর্চায় এসেছিল। দূরত্ববিধি বজায় রাখার জন্য সদনকক্ষের একতলায় বিধায়কদের পাশাপাশি বসা এদিন ছিল নিষিদ্ধ। সেই জন্য আগে থেকেই তার বিকল্প বন্দোবস্ত করে রেখেছিলেন অধ্যক্ষ। মন্ত্রিসভার সদস্য, বিরোধী শিবিরের নেতৃবৃন্দ এবং বয়স্ক বিধায়ক মিলিয়ে প্রায় ২০০ জনের বসার ব্যবস্থা ছিল নীচে। তুলনায় কমবয়সী বাকি বিধায়কদের পাঠানো হয় দোতলায় বাইরের দর্শকদের জন্য নির্দিষ্ট আসনে। পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত মিলিয়ে সেখানেও এদিন প্রায় জনা পঞ্চাশেক বিধায়ক বসেছিলেন। তাঁদের জন্য ছিল কর্ডলেস মাইক্রোফোনও। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বেশ কয়েক ফুট দূরে একই সারিতে বসেছিলেন পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কোর ক্যাবিনেটের সদস্য হিসেবে পরিচিত ববি হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটকরা ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সামনের সারিগুলিতে। ওয়েলের প্যাসেজগুলি, সাংবাদিকদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গাতেও পৃথক চেয়ার দিয়ে বিধায়কদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অল্প কয়েকজন সাংবাদিককে বসার জন্য দোতলায় রাজ্যপালের ভিজিটরদের গ্যালারিতে পাঠানো হয় বিকল্প বন্দোবস্ত হিসেবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen