ন্যাশনাল, ওরিয়েন্টাল, ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনস্যুরেন্স বিক্রির পথে মোদী সরকার
সরকারি ভাবনা হল, সংস্থা মুনাফাজনক হলে বিক্রি করে আয়ও বেশি হবে।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: চারটি বিমা সংস্থার মধ্যে যেগুলি আর্থিকভাবে এখনও যথেষ্ট লোকসানে চলছে, সেগুলি বিক্রিই করে দেওয়ার কথা ভাবছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এই তালিকায় রয়েছে ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স, ওরিয়েন্টাল ইনস্যুরেন্স এবং ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনস্যুরেন্স। প্রাথমিকভাবে স্থির হয়েছে, যে কোনও একটি সংস্থাকে আগে বিক্রি করা হবে। সেই বিক্রির পর মুনাফা ও কর্পোরেটের কাছে কেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, সেটা দেখে পরবর্তী বিমা সংস্থাগুলির কথা ভাবা হবে। একমাত্র নিউ ইন্ডিয়া ইনস্যুরেন্সকে হাতে রেখে দিতে চায় সরকার। কারণ, চার বিমা সংস্থার মধ্যে এই বিমা কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্যই সবথেকে ভালো। যদিও অর্থমন্ত্রক ও নীতি আয়োগের মধ্যে একটি বিকল্প নিয়ে আলোচনা এখনও চলছে। সেটি হল, ক্যাপিটাল ইনফিউশন। অর্থাৎ সরকার এককালীন টাকা দেবে তিন দুর্বল সংস্থাকে। তার জেরে সেগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য ফিরছে কি না, দেখা হবে।
পরবর্তীকালে সেগুলি মুনাফা দিলে কি আর বিক্রি করা হবে না? বিষয়টা এতটাও সহজ নয়। সরকারি ভাবনা হল, সংস্থা মুনাফাজনক হলে বিক্রি করে আয়ও বেশি হবে। কিন্তু এই অভিমতের বিরুদ্ধ যুক্তিও দিচ্ছে নীতি আয়োগ। বলা হচ্ছে, বিএসএনএলকে লাভজনক ও পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একাধিকবার অর্থসাহায্য দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে বিএসএনএলের ক্যাপিটাল ইনফিউশন হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪ সালে ৮৯ হাজার কোটি। অথচ বাস্তবে বিএসএনএল থেকে লাভ হচ্ছে কি?
বিমা সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্য কেমন, সেটা নির্ধারিত হয় সম্পদগত অনুপাতের (সলভেন্সি রেশিও) মাধ্যমে। এই অনুপাত নির্ধারণের পরিমাপক অনুযায়ী বলা হয়, যদি মানক ১.৫০-এর বেশি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে সেই বিমা সংস্থা আর্থিকভাবে স্থিতিশীল। এই মানদণ্ড স্থির হয় কীভাবে? সর্বাধিক বিমার টাকা স্বচ্ছন্দে মেটানোর মতো অর্থ যদি কোনও একটি বিমা সংস্থার কাছে থাকে, তাহলেই সে ‘সুস্থ ও সবল’। অর্থাৎ কাল্পনিকভাবে ধরা হল, একসঙ্গে বিপুল সংখ্যক বিমাকারী ক্লেইম করেছে। তখন কি সংস্থার পক্ষে সেই টাকা মেটানো সম্ভব? যদি সম্ভব হয়, তাহলে তার মানক হবে অন্তত ১.৫০-এর উপর। চার বিমা সংস্থার মধ্যে একমাত্র নিউ ইন্ডিয়া অ্যাস্যুরেন্সের সলভেন্সি রেশিও ১.৮১। কিন্তু বাকিদের এই অনুপাত ১ পেরয়নি। সেটাই উদ্বেগের।
প্রথমে পরিকল্পনা ছিল সংযুক্তিকরণের। অর্থাৎ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ধাঁচেই সরকারি বিমা সংস্থাগুলিকে ধীরে ধীরে মিলিয়ে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে বেঁচে থাকবে আর্থিকভাবে স্বাস্থ্যবান একটি অথবা দু’টি বিমা সংস্থা। ঠিক যেভাবে ব্যাঙ্কের সংখ্যা ২৭ থেকে কমিয়ে ১২ করা হয়েছে। আগামী দিনের লক্ষ্য, এই ১২টিও নয়, পড়ে থাকবে চারটি সরকারি ব্যাঙ্ক। কিন্তু বিমার ক্ষেত্রে সেই পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। তাই ২০২২ সালে নীতি আয়োগ সুপারিশ করেছিল, সংযুক্তিকরণ না হলে একটি বিমা সংস্থাকে বিক্রি করা হোক। বাস্তবায়িত হয়নি সেই উদ্যোগও।