মিথ্যে অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের বৈঠকে বাংলার আধিকারিকদের হেনস্তা, কোন ফন্দি মোদী সরকারের

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি ১০:১০: বিজেপি শাসিত রাজ্যে কেবল বাঙালি শ্রমিকেরাই হেনস্তা হচ্ছে না, কেন্দ্রের বৈঠকে বাংলার আধিকারিকদের হেনস্তা করার অভিযোগ উঠল। বঞ্চনা তো ছিলই হেনস্তাও যুক্ত হল নতুন করে। কেন্দ্রের নির্দেশ মতো যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার পরেও ভার্চুয়াল বৈঠকে, গোটা দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে হেনস্তার শিকার হলেন বাংলার অফিসাররা। এই গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাজ্যের প্রশাসনিক মহল। যাবতীয় শর্ত মেনে নেওয়া সত্ত্বেও সারা দেশের সামনে হেনস্তা মেনে নিতে নারাজ রাজ্য। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “রাজ্যকে বঞ্চনা করার ছুতোয় এটি নয়া সংযোজন। যা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
আবাস সহ বেশ কিছু গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পে নয়া অর্থ বরাদ্দ ব্যবস্থা ‘এসএনএ-স্পর্শ’ চালু নিয়ে সব রাজ্যের সঙ্গে সম্প্রতি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেছিল কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রক। এবার থেকে প্রকল্প বাবদ বরাদ্দের টাকা রাজ্যের হাতে না দিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সরাসরি খরচ হবে। মোদী সরকারের শর্ত মেনে কাজ শুরু করেছে নবান্ন। প্রধানমন্ত্রী আবাস সহ সংশ্লিষ্ট সব প্রকল্পের জন্যই রিজার্ভ ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছে রাজ্য। কিন্তু ২২ জুলাইয়ের বৈঠকে কেন্দ্রের শর্ত অনুসারে বাংলার কাজের তথ্য চেপে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বরং কেন্দ্রের রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, আবাস প্রকল্পের জন্য আরবিআইতে কোনও অ্যাকাউন্টই খোলেনি পশ্চিমবঙ্গ। অভিযোগ, কেন্দ্রের এহেন মিথ্যে দাবির প্রতিবাদ করতেই অর্থমন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব সজ্জন যাদবের নেতৃত্বাধীন আধিকারিকরা ক্ষেপে ওঠেন। কটূ মন্তব্য করে তাঁরা বলেন, ‘হোয়াট ইজ স্পেশাল ইন বেঙ্গল? হোয়াট ইজ স্পেশাল ইন ইউ?’ রাজ্যের অফিসারদের উদ্দেশে বারবার এই একই প্রশ্ন তুলে হেনস্তা করা হয়। বাংলার উপর আরও আর্থিক সীমাবদ্ধতা আরোপের হুঁশিয়ারিও দেন তাঁরা।
অন্যদিকে, আবাস প্রকল্পে পর্যায়ক্রমে রাজ্যে রাজ্যে এই ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। গত ১৮-১৯ জুলাই দিল্লিতে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পারফরম্যান্স রিভিউ কমিটির বৈঠকে জানানো হয়েছিল ‘এসএনএ-স্পর্শ’ ব্যবস্থায় ২০২৬ সালের মার্চে বাংলাকে যুক্ত করা হবে বলে। মঙ্গলবারের বৈঠকের পর গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পাঠানো একটি তালিকায় দেখা যাচ্ছে, বাংলার জন্য নির্দিষ্ট হওয়া সময়সীমা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাংলায় ১০০ দিনের কাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছিল কেন্দ্র। কিন্তু হাইকোর্ট বাংলায় ১০০ দিনের কাজ চালুর সময়সীমা ১ আগস্ট বেঁধে দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের দাবি, এই নির্দেশই মোদী সরকারের ইগোয় আঘাত লেগেছে। জুলাই মাস শেষ হতে এক সপ্তাহও বাকি নেই! এখনও ১০০ দিনের কাজ চালু নিয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি কেন্দ্র। যেকোনও উপায়ে বাংলাকে হেনস্তা করার পথ বেছে নিয়েছে তারা। ‘এসএনএ-স্পর্শ’ ব্যবস্থা চালু না-হলে ভবিষ্যতে আবাস প্রকল্পের একটি টাকাও পাওয়া যাবে না। কেন্দ্রের সব শর্ত মেনে পদক্ষেপ করেছে নবান্ন। তা বিস্তারিতভাবে দিল্লিকে জানানোও হয়েছে। তারপরও বাংলার জন্য বরাদ্দ করা সময়সীমা কেন সরিয়ে দেওয়া হল? উঠছে প্রশ্ন।