লকডাউনের জেরে দিল্লিতে আটকে মা, অভুক্ত দৌড়ে রাজ্যসেরা রত্না

গত বছর সে দৌড়ে রাজ্যসেরা হয়েছে। বাবা নেই। অভাবী সংসার। পরিবারে দিদি ও মা রয়েছেন। দুই মেয়ের মুখে অন্ন তুলে দিতে হতদরিদ্র মা বেশ কয়েক মাস আগেই দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি পরিচারিকার কাজ করেন। পরিচারিকার কাজ করে যা উপার্জন হত, তাই দিয়েই দুই মেয়ের খাবার জোগাতেন তিনি। কিন্তু করোনা এক লহমায় পালটে দিয়েছে সবকিছু। লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়ে দিল্লিতেই আটকে পড়েছেন মা। মায়ের অনুপস্থিতিতে এখন কার্যত অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে দুই বোনকে।

May 5, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

গত বছর সে দৌড়ে রাজ্যসেরা হয়েছে। বাবা নেই। অভাবী সংসার। পরিবারে দিদি ও মা রয়েছেন। দুই মেয়ের মুখে অন্ন তুলে দিতে হতদরিদ্র মা বেশ কয়েক মাস আগেই দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি পরিচারিকার কাজ করেন। পরিচারিকার কাজ করে যা উপার্জন হত, তাই দিয়েই দুই মেয়ের খাবার জোগাতেন তিনি। কিন্তু করোনা এক লহমায় পালটে দিয়েছে সবকিছু। লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়ে দিল্লিতেই আটকে পড়েছেন মা। মায়ের অনুপস্থিতিতে এখন কার্যত অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে দুই বোনকে।

২০১৯-এর ডিসেম্বরে কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকের উছলপুকুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুল থেকে রাজ্য স্তরের খেলায় অংশগ্রহণ করেছিল রত্না বর্মন। তখন সে স্থানীয় ছাট জামালদহ গোলাপচাঁদ প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ত। কলকাতায় সাইয়ের প্রশিক্ষণের মাঠে ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দু’দিনব্যাপী রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক স্কুলসমূহের এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়েছিল। তাতে বালিকাদের ‘খ’ বিভাগে ১০০ মিটার দৌড়ে রাজ্যসেরার শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছিল রত্না বর্মন।

সেসময় নানা মহল থেকে অর্থ সাহায্য ও সংবর্ধিতও করা হয়েছিল এই খুদে খেলোয়াড়কে। কিন্তু বর্তমানে দুবেলা পেটের অন্ন জোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। খোঁজ। তবুও খোঁজ করার মতো কেউই নেই বলে দু’বোন জানিয়েছে। যে প্রাথমিক স্কুল থেকে সে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সেই স্কুলের পাশেই এক চিলতে ভাঙাচোরা ঘরে মায়ের সঙ্গে মাথা গুঁজে থাকতে হয় রত্নাকে। রত্নার মা মিনতি বর্মন পরিচারিকার কাজ করেন।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মিনতিদেবীর ছেলে না থাকলেও তিন মেয়ে রয়েছেন। মেয়েদের মধ্যে রত্নাই সবচেয়ে ছোট। বড় মেয়ে জ্যোতিকার এক বছর আগেই বিয়ে হয়েছে। মেজো মেয়ে অর্পিতা গ্রামের উছলপুকুরি কৃষক উদ্যোগ হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছে। একই স্কুলে রত্না এখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। তাঁদের বাবা যতীন বর্মন অসুখে ভুগে বছর দশেক আগেই মারা গিয়েছেন। স্বামীর অকাল মৃত্যুর পরে তিন মেয়েকে মানুষ করার দায়িত্ব এসে পড়ে একলা মিনতিদেবীর কাঁধে। পরিচারিকার কাজ করে সংসার নির্বাহ করছেন মিনতিদেবী।

বৃদ্ধা দিদিমা সুনতি বর্মনের কাছে মেয়ে দুজনকে রেখে তিনি পরিচারিকার কাজ করতে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন কয়েক মাস আগে। বর্তমানে তিনি দিল্লি থেকে বাড়ি ফিরতে চান। সেজন্য নানা মহলে আর্জি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, মেয়েদের জন্য চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তিনি। অভুক্ত মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি কাতর আবেদন জানিয়েছেন নানা স্তরে। রত্না ও অর্পিতা জানিয়েছে, প্রশাসনের তরফে তাদের সাহায্যের পাশাপাশি মাকে দিল্লি থেকে ফেরানোর ব্যবস্থা করলে তারা উপকৃত হয়।

মেখলিগঞ্জ ব্লকের বিডিও সাঙ্গে ইউডেন ভুটিয়া জানিয়েছেন, ওই পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তারপর প্রয়োজন অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলাশাসক ( উন্নয়ন) জ্যোতির্ময় তাঁতি বলেন, ‘মেয়েটি ক্রীড়াজগতে জেলার নাম উজ্জ্বল করেছে। ওর পরিবারে অভাব রয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen