নেতাজি এখন মোদী সরকারের কাছে ‘জাঙ্ক’, প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালার কর্তার চিঠিতে বিতর্ক

লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন পর্বে গেরুয়া শিবিরের কাছে তিনি ছিলেন ‘জাতীয় অস্মিতা’।

May 13, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন পর্বে গেরুয়া শিবিরের কাছে তিনি ছিলেন ‘জাতীয় অস্মিতা’। আর ভোট মিটতেই নরেন্দ্র মোদী সরকার তাঁকে ফেলে দিল কার্যত ‘আবর্জনা’ বা ‘অতি তুচ্ছ’ একটি বিষয়ের গোত্রে। তিনি বাঙালি তথা দেশের গর্ব নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ভাষায় যিনি দেশের ‘শ্রেষ্ঠতম স্বাধীনতা সংগ্রামী’, তাঁকে নিয়েই এক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমন মনোভাব দেখিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি প্রশাসন। স্বয়ং নেতাজিরই এক আত্মীয়ার তরফে নরেন্দ্র মোদীকে লেখা চিঠির জবাবে অখণ্ড ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান তথা সুভাষচন্দ্র সংক্রান্ত বিষয়কে ‘জাঙ্ক’ বা ‘আবর্জনা’ বলে গণ্য করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ের কর্তার সংক্ষিপ্ত এই উত্তরে হতবাক বসু পরিবারের ওই স্বজন। তিনি আবার বর্তমানে বিজেপির ‘প্রাণপুরুষ’ ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের তৈরি আদি হিন্দু মহাসভায় রাষ্ট্রীয় প্রধানও বটে। নেতাজিকে নিয়ে মোদী সরকারের এহেন মনোভাবে দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। গবেষক থেকে সাধারণ অনুরাগী—এক সুরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে সব মহল।

দিন কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিটি লেখেন দিল্লিবাসী রাজ্যশ্রী চৌধুরী। তিনি সম্পর্কে নেতাজির জেঠতুতো বোন স্নেহলতাদেবীর প্রপৌত্রী। সম্প্রতি তিনমূর্তি ভবন চত্বরে ২৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশাল ‘প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়’-এর উদ্বোধন করেছেন স্বয়ং মোদি। জওহরলাল নেহরু থেকে নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত স্বাধীন ভারতের মোট ১৪ জন প্রধানমন্ত্রীর জীবনী ও কর্মকাণ্ডের ইতিহাস, ছবি, ভিডিও ও ভাষণ স্থান পেয়েছে সেখানে। তা জেনেই ওই সংগ্রহালয়ে সর্বসাধারণের জন্য নেতাজি সম্পর্কিত একটি শাখা রাখার দাবিতে রাজ্যশ্রীদেবী চিঠি লেখেন মোদীকে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে যার জবাবের ভার দেওয়া হয় ওই সংগ্রহালয় দেখভালকারী সংস্থা নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষকে। আর তারা রাজ্যশ্রীদেবীর দাবিকে কেবল নস্যাৎই করেনি, বিষয়টি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে গিয়ে যে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেছে, তাতে বেজায় চটেছেন সুভাষচন্দ্রের এই আত্মীয়া। মিউজিয়ামের ডেপুটি ডিরেক্টর ডঃ রবি কে মিশ্র জবাবি চিঠিতে লিখেছেন, ‘রাজ্যশ্রীদেবীর এই বক্তব্যকে আবর্জনা বা ‘জাঙ্ক’ বিষয় হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বিষয়টি আদৌ কোনও জবাব দেওয়ারই উপযুক্ত নয়।’

এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখতে চলেছেন রাজ্যশ্রীদেবী। সাফ জানিয়েছেন, ‘১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে অখণ্ড ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন নেতাজি। আইএনএ সরকারের ৭৫ বছর উপলক্ষে লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে মোদি নিজেই এই ইতিহাসকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। সেই নিরিখে অখণ্ড ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা সুভাষচন্দ্রের প্রাপ্য। তাই সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে নবনির্মিত প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ে সর্বপ্রথম নেতাজির জন্য একটি বিশেষ শাখা থাকা আবশ্যিক। সেই দাবিতেই চিঠি দিয়েছিলাম। তার এই উত্তর পেলাম।’ মোদীর সেদিনের ভাষণ তুলে ধরেই পাল্টা তাঁকে বিঁধতে চান রাজ্যশ্রীদেবী। অগণিত সুভাষ-অনুরাগীর পাশাপাশি রাজ্যশ্রীদেবীর দাবিকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন নেতাজি গবেষক ডঃ জয়ন্ত চৌধুরীও। তাঁর কথায়, এটাই হল বিজেপি সরকারের সুভাষচন্দ্র সম্পর্কে আসল মূল্যায়ন। বছর দেড়েক আগে নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির একটি বৈঠক হয়নি। এসব করে স্বয়ং মোদীই তো তাঁদের মনোভাব বুঝিয়ে ছেড়েছেন দেশবাসীকে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen