পাঁচিল টপকে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে হল ওমরকে! পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব মমতা
এবার নির্দিষ্ট দিনটির আগেই উপত্যকার লেফ্টেন্যান্ট গভার্নরের তরফে জানানো হয়েছিল, ‘শহিদ দিবস’ পালন করা যাবে না।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:৫৯: ১৯৩১-এর ১৩ জুলাই ডোগরা শাসক হরি সিংহের বাহিনীর গুলিতে নিহত ২২ জন কাশ্মীরিকে শ্রদ্ধা জানাতে রবিবার সকালে আচমকাই ‘মাজার-এ-শুহাদা’ পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা (Omar Abdulla)। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে গাড়ি থামিয়ে দেয়াল টপকে তিনি কবরস্থানে ঢোকেন এবং শহিদদের উদ্দেশে ফাতেহা পাঠ করেন।
গত শনিবার ওই কবরস্থানে যাওয়ার অনুমতি পাননি ওমর এবং বিরোধী নেতারা। গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল তাঁদের। দিল্লি থেকে ফেরার পর ওমর বলেছিলেন, ‘‘ঘরে তালা মেরে রাখা হয়েছে আমাকে।’’
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিভাজন ঘটিয়ে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন তথা ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর নরেন্দ্র মোদি সরকার ‘শহিদ দিবসে’র ছুটি বাতিল করেছিল। এবার নির্দিষ্ট দিনটির আগেই উপত্যকার লেফ্টেন্যান্ট গভার্নরের তরফে জানানো হয়েছিল, ‘শহিদ দিবস’ পালন করা যাবে না। ‘শহিদদের’ কবরস্থান মাজার-ই-শুহাদায় প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। প্রশাসনের কাছে ওই কবরস্থানে প্রবেশের অনুমতি চাওয়া হলে তা খারিজ করা হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হন কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী।
মাজার-ই-শুহাদার সামনে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। ওমরের সঙ্গে রীতিমতো হাতাহাতি হয় তাঁদের। এই অবস্থায় পাঁচিল টপকে শহিদদের কবরস্থানে প্রবেশ করেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী। জুতো হাতে কবরস্থানে পৌঁছে সেখানে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান তিনি। এরপর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সুর চড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক গতকাল থেকে আমাদের এখানে আসতে দেওয়া হয়নি। আমাদের সবাইকে ঘরবন্দি করা হয়েছিল। আমি ওদের জানিয়েছিলাম, ওখানে ফাতিহা পাঠ করতে চাই। তবে ওরা অনুমতি না গিয়ে আমার বাড়ির সামনে রীতিমতো বাঙ্কার তৈরি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা নাকি স্বাধীন দেশ! তাহলে কীভাবে আমাদের আটকানো হয়? গতকালের নিষেধাজ্ঞা আজ কেন? আইন কী বলে?’’ এই প্রশ্ন তুলে নিরাপত্তা বাহিনীর দিকেই তির ছুড়েছেন তিনি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখন ‘দিল কি দুরি’ কমানোর কথা বলেন, তখন শহিদদের স্মরণে যাওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ। এই শহিদরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন— তাঁরা আমাদের গর্ব।’’
এদিকে গোটা ঘটনার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর ওমর আবদুল্লার পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, ‘কেউ যদি শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে যান তাতে সমস্যা কোথায়? এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার সামিল। আজ সকালে নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না। অত্যন্ত লজ্জাজনক।’