ট্যাংরাকাণ্ডের ৯৯ দিনের মাথায় চার্জশিট দিল পুলিশ, মূল সাক্ষী প্রণয়ের নাবালক ছেলে

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি, ১৪:০০: ৯৯ দিনের মাথায় ট্যাংরাকাণ্ডে আদালতে চার্জশিট জমা দিল পুলিশ। তাতে অভিযুক্ত হিসাবে রাখা হয়েছে দে পরিবারের দুই ভাই প্রণয় দে এবং প্রসূন দে-র নাম। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার মূল সাক্ষী করা হয়েছে প্রণয়ের নাবালক সন্তানকে। ১২০০ পাতার চার্জশিটে সব মিলিয়ে ৫১ জন সাক্ষীর নাম রয়েছে বলে খবর। দুই ভাই বর্তমানে জেলেই রয়েছেন।
চার্জশিটে পুলিস জানিয়েছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ট্যাংরার অটল শূর রোডের বাড়ি থেকে দুই গৃহবধূ সুদেষ্ণা ও রোমি এবং প্রসূনের নাবালিকা মেয়ের দেহ উদ্ধার হয়। বাইপাসের ধারে মেট্রোর পিলারে ধাক্কা মারা একটি গাড়ি থেকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয় প্রসূন, প্রণয় এবং এক নাবালককে। দুই ভাই পুলিসকে জানান, তাঁদের বাড়িতে তিনটি দেহ পড়ে রয়েছে। সেই মতো ট্যাংরা থানার পুলিস সেখান থেকে তিনটি দেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়, তিনজনকেই খুন করা হয়েছে।
চার্জশিটে খুনের ‘মোটিভ’ ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, দুই ভাইয়ের লেদারের গ্লাভস তৈরির ব্যবসা ছিল। ২০২৩ থেকে তাঁদের ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়। বাজার থেকে তাঁরা ঋণ নিতে শুরু করেন। তারপরও লাভ না হওয়ায় ঋণের বোঝা ক্রমশ বাড়তে থাকে। একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, বেসরকারি ব্যাঙ্ক, ফিনান্স কোম্পানি থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ নেন দুই ভাই। স্ত্রীদের গয়না ও বাড়ি বন্ধক রেখেও ঋণ নেন। তবে প্রতি বছর গাড়ি বদল এবং ঠাটবাট বজায় রাখায় কোনও খামতি ছিল না তাঁদের। এদিকে, দেনা শোধের জন্য পাওনাদারদের চাপ বাড়তে থাকে। এই অবস্থায় তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, পরিবারের সবাই একসঙ্গে আত্মহত্যা করবেন।
প্রণয়ের নাবালক ছেলে এই পরিকল্পনার কথা জেনে যায়। সে তারমতো করে বাবা-কাকাদের বোঝানোর চেষ্টাও করে। কোনও লাভ হয়নি। দুই ভাই ও তাঁদের স্ত্রীরা প্রথমে ঠিক করেন, ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করবেন। পরে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, পায়েসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সবাই খেয়ে নেবেন। সেইমতো সবাই রাতে পায়েস খান। প্রসূনের মেয়ে পায়েসে কোনও গন্ধ পেয়ে খেতে না চাইলে তার বাবা জোর করেই খাওয়ান। প্রত্যেকে নিজের ঘরে শুয়ে পড়েন। চার্জশিটে বলা হয়েছে, সকালের দিকে প্রসূন উঠে দেখেন, মেয়ে মারা যায়নি। তখন তাকে গলা টিপে খুন করেন। এমনকী, নাবালক ভাইপোকে বালিস চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। সে মরে যাওয়ার ভান করে পড়ে থাকায় বেঁচে যায়। তারপর বৌদি ও স্ত্রীর ঘরে গিয়ে তাঁদের হাতের শিরা কেটে দেন ছোট ভাই প্রসূন। বাথরুমে গিয়ে রক্তমাখা জমাকাপড় ফেলে অন্য পোশাক পরেন। ঘটনার সময় উপরে ছিলেন প্রণয়। তিনি পুরোটাই জানতেন এবং ভাইয়ের কাজে সহযোগিতাও করেছেন। প্রণয়ের ছেলে উপরে উঠে এসে দেখে, বাবা ও কাকা কিছু আলোচনা করছে। ভাইপো বেঁচে গিয়েছে দেখে তারও হাতের শিরা কাটার চেষ্টা করেন কাকা। একবার সিদ্ধান্ত নেন, তিনজন ঝাঁপ দেবেন বাড়ির ছাদ থেকে। সেই চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তাঁরা। নেমে আসেন ছাদ থেকে। এরপর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।