রামকিঙ্কর বেইজ – ভারতীয় শিল্পকলায় আধুনিকতার প্রবক্তা

May 25, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

শান্তিনিকেতনকে যারা গুরুত্বপূর্ণ শিল্পচর্চা কেন্দ্রে রূপান্তরিত করেছিলেন রামকিঙ্কর বেইজ, নন্দলাল বসু ও বিনোদবিহারী মুখার্জী তাদের অন্যতম। শিল্পী হিসেবে তার একটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। বিশেষ এক লক্ষ্য নিয়ে তিনি শিল্পচর্চা করতেন। চিরকুমার রামকিঙ্কর অত্যন্ত নির্মোহ ও খেয়ালি জীবনযাপন করতেন। তার সৃষ্টিকর্মে প্রকৃতি ও প্রান্তিক মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

একাধারে ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ আধুনিক বাঙালি শিল্পীদের অন্যতম। শৈশবে বাঁকুড়ার কুমোরদের কাজ দেখে তিনি বড় হয়েছেন। তাদের দেখাদেখি কাদা দিয়ে মূর্তি গড়েছেন। এভাবেই ভাস্কর্য শিল্পের প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। স্বশিক্ষিত শিল্পী বলতে যা বোঝায় রামকিঙ্কর বেইজ ছিলেন তাই। 

শান্তিনিকেতনকে যারা গুরুত্বপূর্ণ শিল্পচর্চা কেন্দ্রে রূপান্তরিত করেছিলেন রামকিঙ্কর বেইজ, নন্দলাল বসু ও বিনোদবিহারী মুখার্জী তাদের অন্যতম। শিল্পী হিসেবে তার একটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। বিশেষ এক লক্ষ্য নিয়ে তিনি শিল্পচর্চা করতেন। চিরকুমার রামকিঙ্কর অত্যন্ত নির্মোহ ও খেয়ালি জীবনযাপন করতেন। তার সৃষ্টিকর্মে প্রকৃতি ও প্রান্তিক মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

বিষ্ণুপুর মন্দিরের টেরাকোটা ভাস্কর্য দ্বারা তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। টেরাকোটা রিলিফ ও পাথর খোদাইয়ের পাশাপাশি তিনি জল ও তেলরঙে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন। 

শিল্প নির্মাণে তিনি দেশজ উপাদানের প্রাধান্য দিতেন এবং একইসাথে একজন মডেল ও তক্ষণশিল্পীর দক্ষতা ব্যবহার করতেন। তার ভাস্কর্য গতি ও প্রাণপ্রাচুর্যের আধার। ভাস্কর্যের বিমূর্ত রূপরীতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাকারী প্রথম ভারতীয় শিল্পী ছিলেন রামকিঙ্কর। তার ভাস্কর্য গতিশীল, ছান্দিক ও প্রতিসম যার সাথে প্রকৃতির একটি আত্মিক যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া যায়। ভারতীয় ভাস্কর্যের চারিত্র্য নির্মাণে রামকিঙ্করের বিশেষ ভূমিকা অনস্বীকার্য। 

তিনি তার শিল্পকর্মে সাঁওতালদের জীবন ও কর্মের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন পাশ্চাত্য প্রকাশবাদী ঢঙে। তার ভাস্কর্য ও চিত্রকলার কোনোটিই তার সময়ের প্রচলিত ভারতীয় রূপরীতির অনুসারী নয়। সেগুলো তার নিজস্ব ভাবনার ঋদ্ধ প্রকাশ। শহরের আকর্ষণ ছেড়ে দূরে উত্তর কলকাতায় শান্তিনিকেতনে কাটিয়েছেন প্রায় সারাটা জীবন। ওখানকার ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষরা তার আগ্রহ কেড়ে নিয়েছিল। ছবি ও ভাস্কর্যে তিনি তাদের জীবনকে ধরে রাখতে সচেষ্ট হয়েছিলেন।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’, রবীন্দ্রভারতী কর্তৃক ডি. লিট ও ভারতের রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘পদ্মভূষণ’ লাভ করেছেন। দেশে-বিদেশে তার অনেক একক ও যৌথ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতীয় শিল্পকলা চর্চায় আধুনিকতার প্রবক্তা হিসেবে যাদের নাম উচ্চারিত হয় তাদের মধ্যে রামকিঙ্কর বেইজ অন্যতম।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen