অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই – পুষ্টিকর ধান উৎপাদনের গবেষণায় জোর রাজ্যের

গরিব মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও মহিলাদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর করার উদ্দেশে আয়রন ও জিঙ্কসমৃদ্ধ ধান উৎপাদন সারা বিশ্বের কৃষি বিজ্ঞানীদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

February 6, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবে আয়রন ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ পুষ্টিকর ধান উৎপাদনের জন্য গবেষণার কাজ চলছে রাজ্যে। রাজ্য কৃষিদপ্তরের অধীন চুঁচুড়ার ধান গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা এব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। কয়েক বছরের মধ্যে এই কাজে সাফল্য পাওয়ার আশা করছেন তাঁরা। এই ধান গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে বেশকিছু বিশেষ ধরনের ধানবীজ উৎপাদন করতে সফল হয়েছেন, যেগুলি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ফলন দেয়। এর মধ্যে লবণাক্ত জলে ও বন্যার জমা জলের মধ্যে চাষ করার উপযুক্ত ধান রয়েছে। ভূগর্ভস্থ জলে বেশি মাত্রায় আর্সেনিকপ্রবণ এলাকায় চাষ করার জন্য বিশেষ ধরনের ধান উদ্ভাবন করেছেন এখানকার বিজ্ঞানীরা। ওই ধানে ক্ষতিকর আর্সেনিকের পরিমাণ বিপদসীমার নীচে আনা সম্ভব হয়েছে। কেন্দ্রীয় কৃষি গবেষণা সংস্থা ‘আইসিএআর’ অনুমোদন নিয়ে ওইসব ধানবীজের উৎপাদন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের কৃষি বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে তাঁরা পুষ্টিকর ধান উৎপাদনে সাফল্য পাবেন।

গরিব মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও মহিলাদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত সমস্যা দূর করার উদ্দেশে আয়রন ও জিঙ্কসমৃদ্ধ ধান উৎপাদন সারা বিশ্বের কৃষি বিজ্ঞানীদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ম্যানিলার ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট-সহ অনেক দেশে কৃষিবিজ্ঞানীরা এই কাজ করছেন। চুঁচুড়া ছাড়াও দেশের কয়েকটি সরকারি ধান গবেষণা কেন্দ্রে এই কাজ চলছে। চুঁচুড়া ধান গবেষণা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষিদপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা পার্থ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, তাঁদের কাজ এগচ্ছে। বছর চারেকের মধ্যেই ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

জিন প্রযুক্তির সাহায্যে পুষ্টিকর ধান উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া চলছে। বিভিন্ন ধরনের উচ্চফলনশীল এবং হাইব্রিড জাতীয় ধান উদ্ভাবনে মূলত জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। গবেষণা সংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে, এখানে সৃষ্ট শতাব্দী অগ্নিবোরা, জয়াসিলেট প্রভৃতি প্রজাতির ধানে জিঙ্ক ও আয়রনের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু ধান ভানিয়ে রাইস মিলে চাল উৎপাদনের সময় পুষ্টিকর পদার্থগুলির বড় অংশ তুষের সঙ্গে চলে যায়। তাই চালের অংশে আয়রন, জিঙ্ক ধরে রাখতে হবে। সেই চেষ্টাই চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। রাজ্যের পরিবেশ, মাটি যাতে এই ধানের ফলনের উপযুক্ত হয় সেটা পরীক্ষামূলক চাষের মাধ্যমে আগে নিশ্চিত করতে হবে তাঁদের।

তবে চালের মধ্যেমে পুষ্টির জোগান দেওয়ার সরকারি উদ্যোগ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আগামী মার্চ থেকে রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও স্কুলের মিড ডে মিল প্রকল্পে পুষ্টিকর চাল সরবরাহ শুরু হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কয়েক মাস আগে থেকে রাজ্য খাদ্যদপ্তর নিতে শুরু করেছে। গোটা দেশে এই প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। রাইস মিলে বিশেষ যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সাধারণ চালে পুষ্টিকর সামগ্রী সংযোজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর জন্য প্রথম ধাপে সাধারণ চালকে গুঁড়ো করে তার সঙ্গে আয়রন, ভিটামিন, জিঙ্ক প্রভৃতি মেশানো হয়। তারপর ওই মিশ্রণটিকে যন্ত্রের সাহায্যে চালের আকারে নিয়ে আসা হয়। উৎপাদিত সামগ্রীকে বলা হয়, ‘ফর্টিফায়েড রাইস কারনেল (এফআরকে)। দ্বিতীয় প্রক্রিয়ায় এফআরকে-র সঙ্গে সাধারণ চাল (১: ১০০ অনুপাতে) মিশিয়ে পুষ্টিকর চাল উৎপাদন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে এখনও এফআরকে উৎপাদন হয় না। তাই আপাতত ভিন রাজ্য থেকে এফআরকে এনে কিছু নির্দিষ্ট রাইস মিলে দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে পুষ্টিকর চাল উৎপাদন করা হবে। বিজ্ঞানীদের আশা, পুষ্টিকর ধান উৎপাদন শুরু হলে কৃত্রিমভাবে পুষ্টিকর চাল উৎপাদনের প্রয়োজন পড়বে না।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen