বিএলও-দের উপর অসহনীয় কাজের চাপ-আত্মহত্যার ঘটনা! কমিশনের জবাব তলব সুপ্রিম কোর্টের

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:৫০: বঙ্গে এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে পড়ল নির্বাচন কমিশন। বুধবার এই মামলার শুনানিতে উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-দের (BLO) ওপর তৈরি হওয়া অত্যধিক কাজের চাপের বিষয়টি। এমনকি, কাজের চাপে রাজ্যে বিএলও-র আত্মহত্যার মতো গুরুতর অভিযোগও এদিন আদালতের নজরে আনা হয়।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) নতুন প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতেই বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, এসআইআর সম্পন্ন করার জন্য যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তা বিএলও-দের ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গের একজন বিএলও এই কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহ্ত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে যে, রাজ্যে ‘এসআইআরের কাজের চাপে’ এখনও পর্যন্ত তিন জন বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে। এদিন সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে এবং পশ্চিমবঙ্গের এই পরিস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (Election Commission of India) কাছে জবাব তলব করে। আগামী ৯ ডিসেম্বর এই নির্দিষ্ট মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অবস্থান বিএলও-দের মৃত্যুর ঘটনায় আগেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দপ্তর। সিইও মনোজ আগরওয়াল (Manoj Agarwal) জানিয়েছেন, মৃত বিএলও-দের বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যু হলে তা কমিশনকে জানানো হবে। পাশাপাশি, কাজের চাপ কমাতে সিইও স্পষ্ট করেছেন যে, কোনো বিএলও অসুস্থ বোধ করলে বা শারীরিক সমস্যা থাকলে, ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) সিইও-র অনুমতি ছাড়াই তাকে পরিবর্তন করতে পারবেন।
কমিশনের তরফে জানানো হয়, বিএলও-রা ভোটারদের থেকে এনুমারেশন ফর্ম (Enumeration form) সই করে গ্রহণ করলেই তা ‘জমা পড়েছে’ বলে গণ্য হবে। এর সঙ্গে ডিজিটাইজেশনের (Digitization) কোনও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। ডিজিটাইজেশন কমিশনের নিজস্ব প্রক্রিয়া, তাই সেটি সম্পন্ন না হলেও ফর্ম বাতিল হবে না।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর মামলার শুনানির মোড় ঘুরে যায় আধার ও নাগরিকত্বের সাংবিধানিক প্রশ্নের দিকে। আইনজীবী কপিল সিব্বল (Kapil Sibal) প্রশ্ন তোলেন, মাত্র দু’মাসের মধ্যে কীভাবে এই বিশাল প্রক্রিয়া সম্পন্ন সম্ভব? বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকার নিরক্ষর মানুষ কীভাবে ফর্ম পূরণের জটিলতা বুঝবেন, তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
এই পর্যায়ে উঠে আসে আধার কার্ডের প্রসঙ্গ। প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত একটি তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, “আধার কার্ড সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার মাধ্যম। কিন্তু ধরুন কোনও প্রতিবেশী দেশের বাসিন্দা, যিনি এখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন এবং রেশনের জন্য তাকে আধার দেওয়া হয়েছে, শুধুমাত্র আধারের ভিত্তিতে কি তাকে ভোটার হিসেবে গণ্য করা উচিত?”
আদালত জানিয়েছে, এই সাংবিধানিক ও আইনি প্রশ্নগুলি নিয়ে বৃহস্পতিবার ফের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি হবে।