ঘুরে আসুন অজস্র মন্দিরের জেলা বাঁকুড়া থেকে

পাহাড়ি এলাকায় ঘেরা টেরাকোটার স্থাপত্য, গ্রাম্য জনজীবন এবং অজস্র মন্দিরে সেজে ওঠা ঐতিহাসিক বাঁকুড়া জেলা আপনাকে হাতছানি দেয়।

October 12, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

কংক্রিটের দুনিয়াতে থাকতে এক সময় সবাই হাঁপিয়ে উঠি। তাই কাছে পিঠে হওয়া বদলানোর জন্য, পাহাড়ি এলাকায় ঘেরা টেরাকোটার স্থাপত্য, গ্রাম্য জনজীবন এবং অজস্র মন্দিরে সেজে ওঠা ঐতিহাসিক বাঁকুড়া জেলা আপনাকে হাতছানি দেয়। 

বাঁকুড়ার যে যে দর্শনীয় জায়গাগুলো সাধারণ মানুষকে চিরকাল আকর্ষণ করে এসেছে , তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মন্দিরের শহর বিষ্ণুপুর। এছাড়া শুশুনিয়া পাহাড়, বিহারীনাথ পাহাড়, একতেশ্বর মন্দির, ঝিলিমিলি, রাসমঞ্চ মন্দির, জোড়বাংলো মন্দির, শ্যাম রাই মন্দির, মদন মোহন মন্দির, সূতান অরণ্য, মাল্লেশ্বর মন্দির, কালাচাঁদ মন্দির, সিদ্ধেশ্বর শিব মন্দির, গোকূলেশ্বরের পঞ্চরত্ন মন্দির ইত্যাদি। এসব জায়গার আকর্ষণে মানুষ ছুটে যায় লাল মাটির দেশ বাঁকুড়া ‘ য়।

আসুন জেনে নিই বাঁকুড়ার বিশেষ পর্যটন কেন্দ্রগুলো, যেগুলো না দেখলে আপনার ভ্রমণ সার্থক হবেনা। প্রথমে উল্লেখ করি ‘শ্যাম রাই মন্দির’ এর কথা। এটি বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে অবস্থিত একটি মন্দির। এটি ‘পঞ্চরত্ন’ বা ‘পঞ্চচূড়া’ নামেও পরিচিত। মন্দিরটির নির্মাতা রাজা রঘুনাথ সিংহ দেব। টেরাকোটার ধাঁচে নির্মান করা হয়েছে সমগ্র মন্দিরটি। রাসচক্র এবং প্রেম সংক্রান্ত শিল্পকলাগুলি পোড়ামাটির সাহায্যে টেরাকোটার শিল্পশৈলীর মাধ্যমে খুব সুন্দর ভাবে মন্দিরের দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

ভ্রমনার্থীরা এখানকার বিখ্যাত বালুচরি সম্ভার একবার যাচাই করে নিতে পারেন। এছাড়া আপনি এখান থেকে ঘর সাজানো বা ব্যাক্তিগত সংগ্রহে রাখার জন্য বিভিন্ন টেরাকোটার শিল্প নিদর্শন সংগ্রহ করতে পারেন। সারা বছর’ই এখানে ভ্রমণ করা যায়।

এরপর আসি ‘রাসমঞ্চ মন্দির’ এর কথায়। বিষ্ণুপুরের অপর একটি শৈল্পিক নিদর্শন হলো ‘রাসমাচা’ বা ‘রাসমঞ্চ মন্দির’। এটি ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে হাম্পি’র মল্লদেব নির্মান করেন। ল্যাটেরাইট পাথরে তৈরি এই স্থাপত্য’টি দেখতে অনেকটা পিরামিড ধাঁচের। এটি’তে কিছুটা ইসলামিক স্থাপত্যের ছোঁয়া’ও দেখতে পাওয়া যায়। এই মাচা বা মঞ্চ ধাপে ধাপে পিরামিডের আকারে উপরে উঠে গেছে।

বিষ্ণুপুর ছাড়িয়ে বাঁকুড়ার উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত বিহারীনাথ পাহাড়। এখানে বিহারীনাথ মন্দির এবং বিহারী বাবার আশ্রম বিশেষ দ্রষ্টব্য। পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার সীমান্তে অবস্থিত বিহারীনাথ পাহাড়। এমন সুন্দর একটি দর্শনীয় স্থানে গিয়ে দর্শনার্থীদের মন শান্ত এবং পরিতৃপ্ত হয়ে উঠবে। প্রকৃতি এখানে অকৃপণ হাতে তার রূপের ডালি সাজিয়ে রেখেছে। পর্যটক’দের মধ্যে যারা একটু ছবি তুলতে ভালবাসেন, তারা অবশ্যই একবার ঘুরে আসুন এই জায়গা। মধুচন্দ্রিমার জন্যও আদর্শ জায়গা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে বাঁকুড়ার বিহারীনাথ পাহাড়। বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ে অবস্থিত একটি আকর্ষণীয় স্থান হলো পঞ্চতন্ত্র মন্দির। এটি মুলত একটি রাধামাধব মন্দির।

বাঁকুড়ার প্রাণ বিষ্ণুপুরকে এককথায় মন্দির নগরী বলা চলে। বাঁকুড়া জেলায় যে’সকল দ্রষ্টব্য স্থান আছে, তার মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখ্য বিষ্ণুপুর ও মুকুটমণিপুর। এখানকার মন্দির’গুলির দেওয়ালে অসামান্য টেরাকোটার শিল্প নিদর্শন দেখতে সারা বিশ্ব থেকে ভ্রমনার্থীরা ছুটে আসেন। কোনও মন্দিরের দেওয়ালে পাবেন প্রেমের নিদর্শন, আবার কোনোটায় বা আছে মহাভারতের ঘটনাবলী বা শিকারের ঘটনা। মন্দির’গুলির দেওয়ালে পোড়ামাটির অলংকরণ অসাধারণ।

বিষ্ণুপুর দেখা শেষ করে এগিয়ে চলুন মুকুটমণিপুরের দিকে। কংসাবতী আর কুমারী নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত মুকুটমণিপুর। বিষ্ণুপুর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাঁকুড়ার এই বিশেষ দর্শনীয় স্থানটি। রাস্তার দু’পাশে অবস্থিত আকাশমণি গাছের সমাহার দেখে পর্যটক’দের চোখ জুড়িয়ে যাবে। দিগন্তে হাতছানি দিয়ে ডাকবে ছোটো-বড়ো অজস্র টিলা। জলাধার ভেঙে পার্শ্বনাথ পাহাড়ের মাথায় রয়েছে পার্শ্বনাথ স্বামীর মন্দির। পাশেই আছে বিশালাকার শিবলিঙ্গ। মন্দির দর্শনের পর দিনান্তে সুখের বিদায় নেবার অপরূপ মায়াবী দৃশ্য অনেক অনেক দিন স্মৃতিতে থেকে যাবে। জলাধারে দাড়িয়ে থাকা নৌকোয় জলবিহারের মজা নিতে পারেন। এই স্থানেও অনেক মন্দির আছে, যেমন – অম্বিকা মাতার মন্দির, ভৈরব মন্দির। এছাড়াও আছে সংরক্ষিত অরণ্য, টিকিট কেটে ঘুরে আসতে পারেন পরিবারের সাথে। 

তবে আর কিসের ভাবনা ? বেড়িয়ে পড়ুন ছুটির দিনে ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen