কলকাতায় মৃত্যুর ঘটনায় চাকরি পাবেন মৃতদের পরিবারের সদস্যরা, দার্জিলিংয়ে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ১৪:৫৫: উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট বিপর্যয়ের মুখে টানা কয়েক দিন ধরে সরেজমিনে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার দার্জিলিঙে (Darjeeling) প্রশাসনিক বৈঠকে (Administrative Meeting) তিনি বলেন, “দুধিয়ার অস্থায়ী সেতু আর সাত দিনের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে। পাশাপাশি একটি স্থায়ী সেতুর কাজও চলছে, যা বছর দেড়েক আগেই শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই পায়ে হাঁটার জন্য একটি ছোট সেতু তৈরি করা হয়েছে।”
বৈঠকে পাহাড়ের ক্ষয়ক্ষতি, পুনর্গঠন, ত্রাণ এবং উদ্ধারকাজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, দার্জিলিঙের ৯টি ব্লক ও ৪টি মহকুমা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১,৩০০-রও বেশি মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
মমতার কথায়, “ওরা তলিয়ে যেতে পারতেন, ভগবানের কৃপায় বেঁচে গিয়েছেন।”
উদ্ধারকাজে যুক্ত সমস্ত প্রশাসনিক কর্মী ও সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “টুডে, আই স্যালুট অল দ্য টিম-বিডিও, ডিএম, এসপি, পুলিশ, এনডিআরএফ- প্রত্যেকেই অসাধারণ কাজ করেছে।”
বর্তমানে প্রায় ৬,৫০০ মানুষকে ৩৭টি ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে। তাঁদের রান্না করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, “প্রতিটি পরিবারকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে যা যা দরকার, সব ব্যবস্থা করা হবে। হারিয়ে যাওয়া সমস্ত নথিও দ্রুত দেওয়া হবে।”
এদিন বৈঠকে মমতা ফের প্রতিবেশী রাজ্য থেকে জল ছাড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাঁর অভিযোগ, “আমরা এক পয়সা পাইনি, তা সত্ত্বেও আমাদের সরকার মানুষকে সাহায্য করেছে, সবাই তা দেখেছেন।”
জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “কেন্দ্র টাকা না দিলেও আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কেউ সাহায্য করতে চাইলে ডিজাস্টার রিলিফ ফান্ডে অনুদান দিতে পারেন। এই ফান্ড ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির নামে চালু হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০১১ সালের পর থেকে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে রাজ্যের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
দুর্যোগের জেরে পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও বিপর্যস্ত, তবে মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধান ও প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপে কিছুটা ভরসা ফিরে পাচ্ছেন দার্জিলিং, মিরিক ও মালবাজারের বাসিন্দারা।
এছাড়াও পুজোর মুখে কলকাতায় মাত্র পাঁচ ঘণ্টার বৃষ্টিতে জল জমে মৃত্যু হয়েছিল ১২ জনের, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। বুধবার দার্জিলিংয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ও একজন সদস্যকে চাকরি দেওয়া হবে ১৭ অক্টোবর।
প্রতিপদের রাতে যাদবপুর, পার্কসার্কাস, তারাতলা, ভবানীপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় জমা জলই হয়ে উঠেছিল মৃত্যুফাঁদ। মোমিনপুর, নেতাজিনগর, ঠাকুরপুকুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা মিলিয়ে প্রাণ হারান ১২ জন। ঘটনার জন্য সিইএসসি-কে (CESC) দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের তরফে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ও একজনকে চাকরি দেওয়ার ঘোষণা আগেই করেছিলেন তিনি। এবার দার্জিলিং থেকে জানালেন, ১৭ অক্টোবর শেকসপিয়র সরণির কোনও এক মণ্ডপে সেই নিয়োগপত্র ও আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া হবে।