এবারও স্বাস্থ্যবিমার উপর জিএসটি হার কমানোর কোনও সিদ্ধান্ত হল না GST কাউন্সিলের বৈঠকে
সরকারি তথ্য বলছে, পাঁচ বছরে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম বাবদ আদায় বেড়েছে ৯৮.৩৮ শতাংশ। অথচ বিমা পলিসি বা গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ১১.২২ শতাংশ

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: স্বাস্থ্যবিমার উপর থেকে জিএসটি প্রত্যাহার বা কমানোর বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত সোমবার জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে হল না। পিটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য বিমা প্রিমিয়ামে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) এর সম্ভাব্য হ্রাস সংক্রান্ত বহুল প্রত্যাশিত ঘোষণা এদিন স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি এখন কাউন্সিলের পরবর্তী সভায় তোলা হবে বলে জানা গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষকে তারা স্বাস্থ্যবিমার আওতায় নিয়ে আসবে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের নিরিখে এক্ষেত্রে ভারত রয়েছে পিছনের সারিতে। জীবন বিমা ছাড়া অন্য সব বিমা কেনার হার এক শতাংশেরও কম। তার কারণ একটাই—বিমার প্রিমিয়াম বাবদ বিপুল খরচ।
সরকারি তথ্য বলছে, পাঁচ বছরে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম বাবদ আদায় বেড়েছে ৯৮.৩৮ শতাংশ। অথচ বিমা পলিসি বা গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ১১.২২ শতাংশ। এখান থেকেই স্পষ্ট, প্রিমিয়াম খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গ্রাহক সেভাবে না বাড়লেও স্বাস্থ্যবিমা সংস্থাগুলি লাগাতার বাড়িয়ে গিয়েছে কিস্তির টাকা। সেই প্রিমিয়াম মেটাতে জেরবার মধ্যবিত্ত। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বড় দেশগুলির কোথাও বিমার উপর করের চাপ নেই। অথচ এদেশে বিমার উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি চাপানো হয়েছে। এটাই বিশ্বে সর্বাধিক। জেনারেল ইনসিওরেন্স কাউন্সিলের তথ্য বলছে, আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে বিমার উপর কোনও কর নেই। মালয়েশিয়া ও চীনে তা ৬ শতাংশ। সিঙ্গাপুরে আগে স্বাস্থ্যবিমায় জিএসটি চালু ছিল। গত বছর থেকে তাও তুলে দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামের উপর করের বোঝা কি কমতে চলেছে? আজ, সোমবার জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক। সেখানে কি এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হবে? সেদিকেই তাকিয়ে ছিল দেশের আম জনতা। কারণ, সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিমা ও জীবন বিমার উপর ১৮ শতাংশ হারে জিএসটি দিতে হয়। এই হার কমানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে দরবার করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। কর্ণপাত করেনি কেন্দ্র। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গাদকারি স্বাস্থ্যবিমার উপর জিএসটি কমানোর জন্য লিখিতভাবে আর্জি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে। চিঠি গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফেও। এসব কারণে প্রবল চাপের মুখে আজকের কাউন্সিল বৈঠকে জিএসটির হার কমানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এর আগের জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক শেষে নির্মলাদেবী জানিয়েছিলেন, বিমার উপর জিএসটি কমানোর প্রস্তাব তাঁদের কাছে আসেইনি। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে অর্থমন্ত্রকেরই স্ট্যান্ডিং কমিটির একটি রিপোর্ট কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছে নির্মলার দাবি। সংসদে পেশ হওয়া সেই রিপোর্টে স্পষ্ট সুপারিশ করা হয়েছিল, স্বাস্থ্যবিমা এবং টার্ম ইনসিওরেন্সের ক্ষেত্রে জিএসটির ভার লাঘব করা হোক। বিশেষত প্রবীণ নাগরিকরা যে স্বাস্থ্যবিমা কেনেন, তার উপর জিএসটি কমানোর কথা বলা হয়। পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রিটেল পলিসি বা ব্যক্তিগত বিমা প্রকল্পকেও এর আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে স্ট্যান্ডিং কমিটির ওই রিপোর্টে।