কাঞ্চন পাহাড়ের ছায়ায় গ্লেনমেরির কাছে

December 1, 2019 | 3 min read

Authored By:

Drishti Bhongi Drishti Bhongi
Published by: Drishti Bhongi

গন্তব্য তাকদা চা-বাগান। কিন্তু এই তাকদা তিনচুলের পাশের গ্রাম নয়, যেখানে সরকারি অর্কিড খামার আছে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার চেনা রাস্তায় কার্শিয়াং হয়ে অনেক বারই তো গিয়েছেন। আজ সেবক রোড ধরে রম্ভি পর্যন্ত চলুন। তার পর বাঁ দিকে মংপু যাওয়ার রাস্তায় পাক খেয়ে উপর দিকে উঠে যাওয়া। চিন্তার কারণ নেই, অনেক দূর পর্যন্ত মসৃণ, ঝকঝকে।

মংপু থেকে ‘তিন মাইল’ নামে ওই মোড়ের মাথা পর্যন্ত অতি শুনশান। সবুজের জলসাঘরে প্রকৃতির মায়ার আঁচল পাতা। চলার নেশা যেন পেয়ে বসে। দু’পাশে প্রাচীন অরণ্য। উপরে নীচে আলো-ছায়ার মায়াময় জাফরি। অপ্রচলিত পথে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির ভিড় থাকে না বলে আরও মজা। মন গেয়ে ওঠে, ‘এলেম নতুন দেশে।’

মংপু ছাড়ার ৪০-৪৫ মিনিট পরে পৌঁছে যাবেন তিন মাইল মোড়ের মাথায়। এই রাস্তা এখানেই শেষ। নতুন পথে বাঁ দিকে সামান্য গেলেই জোড়বাংলো, সেখান থেকে দার্জিলিং ১৫ মিনিট। আপনাদের গাড়ি ঘুরবে ডাইনে, লামাহাট্টা ও পেশক চা-বাগান হয়ে তিস্তাবাজারের দিকে। কিন্তু ওগুলির কোনওটাতেই আজ যেতে হবে না। ডাকছে অচিন ঠিকানা!

লামাহাট্টা প্রবেশের ঠিক আগে তাকদা চা-বাগানের রাস্তা বাঁ দিকে নেমে গিয়েছে। একটা বাঁক ঘুরতেই বাগিচার চোখজুড়নো সবুজ সাম্রাজ্য। যত দূর চোখ যায়, পটে আঁকা ছবির মতো দৃশ্যাবলী। গাড়ি থামিয়ে ঘুরে বেড়ানো, মনে মনে পাখি হয়ে উড়ে বেড়ানো প্রকৃতির কোলে। অফুরান সবুজ ছুঁয়ে ফটোসেশন ভালই জমবে। ছায়াময় শেড ট্রি-র উপরে নীলাকাশ দিগন্ত ছুঁয়েছে। ধোঁয়া ধোঁয়া পাহাড়ের মাথায় একটি শহরের আভাস। ওটাই দার্জিলিং।

আর একটু চলার পর বাগান কর্মীদের পাড়া। চা-বাগিচার পটভূমিকায় ছবির মতো সুন্দর। পথপাশের চা-দোকানে বসে ক’মিনিট কাটাতে পারেন, নয়তো এক দৌড়ে গ্লেনমেরি হোম স্টে। এটাই তাকদা বাগানের সীমানায় একমাত্র অতিথিনিবাস। ভাঙাচোরা রাস্তা আরও নীচে গ্লেনবার্ন চা-বাগানে নেমে গিয়েছে। সেখানে ব্রিটিশ আমলের নানা স্থাপত্য ও প্রকৃতির রূপ দেখতে যেতেই পারেন।

গ্লেনমেরি হোম স্টে ফুলের জলসার মধ্যে একতলা তিনটি কটেজের সমাহার। দু’টিতে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা। অন্যটিতে ডাইনিং হল। পারিবারিক পরিমণ্ডলে অন্য রকম দিন যাপনের রঙিন আয়োজন। কটেজগুলি আধুনিক ও সুন্দর ভাবে সাজানো। কিন্তু সবচেয়ে বড় আকর্ষণের জায়গা ব্যালকনি। সামনেই দার্জিলিং শহর। সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে সাড়ে সাত হাজার ফুটে কংক্রিটের জঙ্গল দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়।

কিন্তু এখানেই আবার মন মেরামতের এলাহি ব্যবস্থা করে রেখেছে পরমা প্রকৃতি। সামনে ও আশপাশে নানা রকম ফলের বাগান। ঝোপে ঝোপে নানা রঙের ফুল। হালকা শীতের আমেজ নিয়ে গ্রামের পথে ও বাগানে ঘুরে বাকি দিনটা মহা মজায় কেটে যাবে। গ্লেনমেরির আর এক আকর্ষণ ঢালাও খাওয়াদাওয়া। বাড়ির লোকেরা পরম যত্নে রান্না ও পরিবেশন করেন। এই আন্তরিকতা ভ্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করে।

পর দিন নীচের পাহাড়ে আলো ফোটার আগেই শীতপোশাক জড়িয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ান। দার্জিলিংয়ের পর্যটকেরা যে দৃশ্য দেখার জন্য রাত থাকতে গাড়ি চড়ে টাইগার হিল যান, সেটা এখান থেকে দেখা যাবে অনায়াসে। তার জন্য অবশ্য আকাশ মেঘহীন থাকা চাই। ডান দিকের দিগন্তে, যে দিকে নামচি শহর, ক্রমশ আলো পড়বে বরফরাজ্যের দেওয়ালে৷ নতুন দিনের কমলা আলোয় উদ্ভাসিত হবে কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাবরু, জানু, পাণ্ডিম ইত্যাদি শৃঙ্গের বরফ-শরীর।

যাবেন কি ভাবে: শিলিগুড়ি থেকে তাকদা চা-বাগানের গ্লেনমেরি হোম স্টে প্রায় ৬৫ কিমি। গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া সুবিধাজনক। দার্জিলিং থেকে কমবেশি ৩০ কিমি। এখান থেকে সহজে গ্লেনবার্ন চা-বাগান ও লামাহাট্টা বেড়িয়ে আসা যায় ৩-৪ ঘণ্টায়।

একমাত্র থাকার জায়গা গ্লেনমেরি হোম স্টে। ডাবল বেডরুমে দু’জনের থাকা ও সারা দিনের খাওয়া ধরে ভাড়া দিনপ্রতি ৩৫০০ টাকা। অগ্রিম বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ: বিপ্লব দে, ফোন: ৯৭৩৩৪৫৪৭৭৯

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ফলো করুন :

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen