‘বিজেপি সরকারই পারে হিংসার অবসান ঘটাতে’-এই প্রচারের মাঝেই মণিপুরে উদ্ধার ১৩ জনের মৃতদেহ!
বিকেলে আচমকাই গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে মায়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা টেংনৌপাল জেলার লেইথু গ্রাম।

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: কেন্দ্র ও মণিপুরের সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফোর্সের (ইউএনএলএফ) সঙ্গে শান্তি চুক্তি সই করার চার দিনের মধ্যে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সোমবার বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ ১৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।
ইউএনএলএফের সঙ্গে শান্তিচুক্তির মোদী সরকার প্রচার শুরু করেছিল, বিজেপি সরকারই পারে হিংসার অবসান ঘটাতে। কিন্তু তারপর মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সোমবার ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ঝরে গেল তরতাজা ১৩টি প্রাণ। যা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
তবে এই বন্দুকযুদ্ধ দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যেই হয়েছে কি না সে সম্পর্কে এখনো রাজ্য পুলিশ নিশ্চিত নয়। পুলিশ মনে করছে, এই সংঘর্ষের সঙ্গে গত সাত মাস ধরে চলা জাতিগত হিংসার কোনো সম্পর্ক নেই।
বিকেলে আচমকাই গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে মায়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা টেংনৌপাল জেলার লেইথু গ্রাম। জেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পৌঁছে যায় নিরাপত্তা বাহিনী। গ্রাম থেকে উদ্ধার হয় ১৩ জনের গুলিবিদ্ধ দেহ। পুলিসের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, লেইথু গ্রামে দু’টি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বাঁধে। সেই সময়ই গুলি চলে। তবে দেহগুলির আশপাশে কোনও অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। মৃতরা কেউ স্থানীয় বাসিন্দাও নন। তাঁরা অন্য জায়গা থেকে এসে পৃথক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বলে অনুমান। মৃতদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
জাতি-হিংসায় উত্তপ্ত মণিপুরে ব্যতিক্রম ছিল টেংনৌপাল। এই জেলায় তেমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের রেকর্ড নেই। সম্প্রতি জেলার সাইবোলে অসম রাইফেলসের একটি টহলদারি গাড়ির উপর আইইডি হামলা হয়েছিল। দুই জওয়ান সামান্য জখম হয়েছিলেন। সোমবারের ঘটনার পর থেকে থমথমে লেইথু। আতঙ্কে দিন কাটছে বাসিন্দাদের। অশান্তি এড়াতে রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিস ও নিরাপত্তা বাহিনী।
মণিপুরে শান্তি ফেরাতে কেন্দ্রের ব্যর্থতা নিয়ে বরাবরই সরব বিরোধীরা। কিন্তু মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ছ’মাস হতে চলল, এখনও তাঁর যাওয়ার সময় হয়নি। সংসদের বাদল অধিবেশনে তাঁর বিবৃতি দাবি করে সরব হয়েছিল প্রতিটি বিরোধী দল।
চলতি বছরের ৩ মে থেকে লাগাতার জাতিগত সংঘর্ষে মণিপুরে ১৭৫ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। বাড়িঘর হারিয়ে ত্রাণ শিবিরে এখনো রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। হিংসায় বাড়িঘর হারিয়েছিলেন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ। দীর্ঘ ছয় মাস সংঘাত চলার পরে গত একমাস যাবত মোটামুটি শান্ত ছিল উত্তরপূর্ব ভারতের এই রাজ্য। কিন্তু সোমবারের ঘটনা চিন্তিত করে তুলেছে প্রশাসনকে।