আজ ১৫ রাজ্যের মহাজোট-বৈঠকের নেতৃত্ব দেবে বাংলা
তার আগে ঋণ ইস্যুতে বাংলার নেতৃত্বে একজোট হয়ে কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়ানোর দিকে এগচ্ছে রাজ্যগুলি। এই তালিকায় রয়েছে কর্ণাটক ও বিহারের মতো এনডিএ-শাসিত রাজ্যও।

জিএসটির কারণে বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েছে রাজ্যগুলি। হিসেব মতো তা পুষিয়ে দেওয়ার কথা কেন্দ্রের। কিন্তু দৈব দুর্বিপাকের দোহাই দিয়ে উল্টে রাজ্যগুলিকে বাজার থেকে টাকা ধার করার দাওয়াই দিয়েছে মোদি সরকার। কেন্দ্রের এই প্রস্তাবে বেঁকে বসেছে ১৫টি রাজ্য। সেই তালিকায় সামনের সারিতে পশ্চিমবঙ্গ। অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আজ, সোমবার হতে পারে সেই মহাজোট-বৈঠক। মঙ্গলবার জিএসটি ক্ষতিপূরণের বিকল্প নিয়ে ফের বৈঠক ডেকেছে মোদি সরকার। তার আগে ঋণ ইস্যুতে বাংলার নেতৃত্বে একজোট হয়ে কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়ানোর দিকে এগচ্ছে রাজ্যগুলি। এই তালিকায় রয়েছে কর্ণাটক ও বিহারের মতো এনডিএ-শাসিত রাজ্যও।
জিএসটি চালুর সময় মূল শর্ত ছিল, রাজ্যগুলির যে আর্থিক ক্ষতি হবে, তা টানা পাঁচ বছর পুষিয়ে দেবে কেন্দ্র। সামগ্রিকভাবে এখন সেই ক্ষতির অঙ্ক তিন লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু জিএসটির কারণে ৯৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাকি করোনার জন্য। আর সেই মহামারীর ‘অজুহাতেই’ ক্ষতি মেটানোর টাকা কেন্দ্রের হাতে নেই বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এই বিপুল অঙ্কের ক্ষতির মধ্যে ৬৫ হাজার কোটি টাকা মেটানো যেতে পারে কেন্দ্রের হাতে থাকা সেস-তহবিল থেকে। বাকি টাকা ধার করুক রাজ্যগুলি—এই প্রস্তাব কেন্দ্রের। তার জন্য দু’টি বিকল্প রাস্তা খুলে রেখেছে তারা। এক, ধরে নিতে হবে করোনায় রাজ্যগুলির কোনও ক্ষতি হয়নি। তাহলে ৯৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবে রাজ্যগুলি। শর্তসাপেক্ষে তার সুদ মেটাবে কেন্দ্র। সেস-তহবিল থেকে তা মিটিয়ে দেওয়া হবে। দ্বিতীয় রাস্তাটি হল, ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকা রাজ্যগুলি বাজার থেকে ধার নেবে। এবং তার সুদ মেটাবে রাজ্যই।
রবিবার এপ্রসঙ্গে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার বিশ্বাসভঙ্গ করছে। গত মার্চ মাসে নির্মলা সীতারামন জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা ক্ষতি পুষিয়ে দেবেন। এটা কেন্দ্রের সংসদীয় বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। অথচ এখন পুরো উল্টো কথা বলছে কেন্দ্র। ইউপিএ আমলে জিএসটির বিরোধিতা করার সময় অরুণ জেটলিদের আশঙ্কা ছিল, কেন্দ্র ক্ষতিপূরণ মেটানোর প্রতিশ্রুতি রাখবে না। আজ তাঁদের দল ক্ষমতায়। অথচ সেই একই অভিযোগ আনছে রাজ্যগুলি। সেই তালিকায় বিজেপি-শাসিত রাজ্যও আছে।
কিন্তু রাজ্য ধার করলে সমস্যা কোথায়? অমিতবাবুর বক্তব্য, একেই ঋণের বোঝা বইতে বেগ পেতে হচ্ছে। তার উপর নতুন করে সুদের ভার চাপলে রাজ্য চালানো দায় হবে। তাঁর দাবি, যে ঋণ রাজ্যগুলিকে নিতে বলা হচ্ছে, সেই টাকা কেন্দ্র ধার করে ক্ষতিপূরণ মেটাক। আমরা কর বাবদ যে যে খাতে আয় করতাম, তার ৭০ শতাংশ কেন্দ্র নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। অথচ আমরা টাকা ধার করলে নাকি সমস্যা হবে না! যে ঋণ কেন্দ্রের সমস্যা বাড়াবে, তা রাজ্যের সঙ্কট বাড়াবে না? কেন্দ্রের হাতে টাকা ছাপানোর মেশিন আছে। তারা আর্থিক ঘাটতিতে লাগাম দিতে পারে। কিন্তু আমাদের হাতে সেই ক্ষমতা নেই। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও কেন্দ্রকে বলেছে, ধার করতে হলে তারাই করুক। রাজ্যগুলির উপর যেন ঋণের বোঝা বাড়ানো না হয়। অমিতবাবুর আশঙ্কা, আসলে রাজ্যগুলিকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দেশের গণতান্ত্রিক ও সংসদীয় কাঠামো ভেঙে দিতে চাইছে মোদি সরকার।
সেক্ষেত্রে উপায়? রাজ্যের অর্থমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণই চাই। ১৫টি রাজ্য কেন্দ্রের এই ঋণ নেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসব। আজ, সোমবারই সেই আলোচনা হতে পারে। তারপর আমরা কেন্দ্রের কাছে বলব, ঋণ নেওয়া কেন অসম্ভব!