শীতের ভ্রমণ – নিরালা, নির্জনে
“বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর”
জীবনানন্দের এই লাই্নেই বাংলার প্রাকৃতিক রূপের যথার্থ ব্যাখা করা হয়েছে। বাংলাকে সম্পূর্ণ রূপে অনুসন্ধান করতে পারলে সারা পৃথিবীর বৈচিত্রের স্বাদ পাওয়া যেতে পারে। হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর, ডুয়ার্স থেকে সুন্দরবন, রূপবৈচিত্রে বাংলার জুড়ি মেলা ভার। আর বাঙালির তো পায়ের তলায় সর্ষে – সকলেই মানেই কম বেশি ভ্রমণ পিপাসু।
এই শীতের ছুটিতে একটা ছোট ট্যুর হয়েই যেতে পারে। জনপ্রিয় জায়গা তো আছেই, তাছাড়াও আছে কিছু নৈসর্গিক নিরালা ব্যাতিক্রমি স্পট। এখনো কিছুটা হলেও ভীড়ের আড়ালে। একবার গেলে নিশ্চিত ভাবেই পস্তাতে হবে না। ফিরে আসা যাবে একরাশ ভালো অনুভুতি নিয়ে।
চট করে দেখে নেওয়া যাক সেই ট্যুরিস্ট স্পটগুলি:
গড়পঞ্চকোট
পুরুলিয়া থেকে মাত্র ৭১ কিলোমিটার দূরেই গড়পঞ্চকোটে গেলেই দেখতে পাওয়া যাবে ১৫০ বছর পুরনো সভ্যতা। প্রাচীন মন্দির দিয়ে ঘেরা এই গ্রামে সন্ধান পাওয়া যাবে পঞ্চরত্ন, জোড়বাংলা, প্রিহার মতো প্রাচীন স্থাপত্যের। এই মন্দিরগুলির মূল আকর্ষণ তাদেরকে ঘিরে থাকা সবুজ টিলা।
মুকুটমণিপুর
বাঁকুড়া শহর থেকে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মুকুটমণিপুরের মূল আকর্ষণ কংসাবতীর বাঁধ। সম্প্রতি এখানে বাঁকুড়ার হস্তশিল্প এবং অন্যা্ন্য উপহার সামগ্রীর সারি বাঁধা দোকান তৈরি হয়েছে। জলাধারে সবান্ধব বোটিং করতে করতে স্বচ্ছ শীতল জলে হাত ভিজিয়ে ছবি তুলতে তুলতে দিব্যি কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারেন।
লেপ্চাজগত
দার্জিলিং থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,৯৫৬ ফিট ওপরে অবস্থিত লেপ্চাজগত। অজস্র পাখির বাসস্থান এই জায়গাটির নামকরন সার্থক। মূল আকর্ষণ, এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার ৫টি চূড়াই সুন্দর দেখা যায়। সূর্যোদয়ের সময় যখন সূর্যের সোনালী কিরণ এই বরফে ঢাকা চূড়াগুলির ওপর পড়ে, সেই নৈসর্গিক দৃশ্য “আহা কি দেখিলাম, জন্ম-জন্মান্তরেও ভুলিব না”। এছাড়া খুব কাছেই ঘোরার জন্যে রয়েছে ঘুম মোনাস্ট্রি, মিরিক হ্রদ, কার্শিয়াং।
সান্দাকফু
ট্রেকিং-এ উৎসাহী, রোমাঞ্চপ্রিয় বাঙালির ভ্রমনসূচীতে অবশ্যই থাকা উচিৎ সান্দাক্ফু। পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে উঁচু চূড়াটি সমুদ্র তট থেকে ১১, ৯২৯ ফিট ওপরে অবস্থিত। তুষারাবৃত এই চূড়ার শোভা আরো বাড়িয়ে দেয় সিল্ভারফির গাছ, শ্বেতশুভ্র ম্যাগ্নোলিয়া এবং গাড় লাল রোডডেন্ড্রন। মানেভঞ্জন থেকে ট্রেক শুরু করে বুদ্ধিস্ট মোনাস্ট্রি, হুসড গ্রাম হয়ে চূড়ায় পৌছনো।
চেচুড়িয়া
বিষ্ণুপুর থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কৃত্তিম ভাবে তৈরী এই অভয়ারণ্য পিকনিকের জন্যে হতে পারে এক অসাধারন জায়গা। সারি সারি গাছ এবং নিরালার এক অপূর্ব মিশেল।
দুয়ারশীনি
বর্ধমান থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট্ট আদিবাসী গ্রাম। মেঠো পথ, শাল, পিয়াল, শিমূল,পলাশের ঘন সবুজ জঙ্গল আর বাবলি নদী গ্রামটিকে স্বর্গীয় সুন্দর করে তুলেছে। রাতে আদিবাসী গ্রাম থেকে ভেসে আসা মাদলের শব্দ উপরি পাওনা।
জুনপুট
দীঘা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই সমদ্র সৈকত, নিরালা প্রেমী বাঙালির স্বপ্নের গন্তব্য হতেই পারে।
বক্সা
অর্কিড এবং ভেষজ উদ্ভিদে পরিপূর্ণ এই টাইগার রিজার্ভটি শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আলিপুরদুয়ার জেলায় অবস্থিত এই জঙ্গল ভুটান বর্ডার পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মূল আকর্ষণগুলি হল, বক্সা ফোর্ট, মহাকালেশ্বর মন্দির, মহাকাল গুহা এবং পোখরি। জঙ্গলের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে জয়ন্তী। দেখতে পাওয়া যাবে বেঙ্গল টাইগার, তিন ধরনের পাইথন, হাতি এবং অনেক পাখি।
রসিক বিল
বক্সার জঙ্গলেরই এক অংশে থাকা রসিক বিল পাখি প্রেমীদের জন্য স্বর্গ। সবুজে ঘেরা এই হ্রদে শীতকালে দেখতে পাওয়া যাবে দেশি-বিদেশি বহু পাখি। অদূরেই রয়েছে ডিয়ার এবং ক্রোকডাইল পার্ক।
দেউলঘাটা
কংসাবতীর তীরে অবস্থিত দেউলঘাটায় বাংলার সমৃদ্ধ অতীতকে ফিরে পাওয়া যাবে। ১৫ টি প্রাচীন মন্দিরের স্থাপত্য মূল আকর্ষণ। প্রত্যক্ষ করা যাবে বাংলার সুবর্ণ যুগকে।