বরাবর নাগা সন্যাসীদের আখড়া তৈরী করে মুসলিম পরিবার
ধর্মের ভেদ নেই এই মেলায়। গোটা মেলা জুড়ে হিন্দু–মুসলিমের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। এদেশের সাধুরাও সনাতন মানবধর্মে বিশ্বাসী। গঙ্গাসাগর মেলায় প্রতিবছর কয়েকশো নাগা সাধু হাজির হন। পরম্পরায় সেই সাধুদের আখড়া বানিয়ে আসছেন সাগরের কালীবাজারের বাসিন্দা শেখ পরিবার। প্রায় পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে কপিলমুনি মন্দিরের পাশে নাগাদের আখড়া বানায় এই পরিবার প্রধান দানিশ শেখ।
নবতিপর দানিশ এখন হাঁটা–চলা করতে পারেন না। বাড়িতেই থাকেন। কিন্তু বাবার সেই কাজ করে চলেছেন বড় ছেলে শেখ মহম্মদ। তিনিও এক সময় বাবার সঙ্গে কাজ করতেন। এখন পুরো দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। জানুয়ারি মাস পড়ার প্রায় দেড় মাস আগে থেকে হোগলা, মাটি, বাঁশ জোগাড় করেন শেখ মহম্মদ। তারপর ধাপে ধাপে তৈরি করে দেন ৫ ফুট বাই ৫ ফুটের আখড়া। গত কয়েক বছর ধরে অবশ্য বেশ কয়েকটি নাগা আখড়া পাকা করে দেওয়া হয়েছে। তবে অধিকাংশ নাগা আখড়া এখনও পুরনো ধাঁচায় তৈরি।
মধ্য পঞ্চাশের শেখ মহম্মদের নেশা পান খাওয়া। সাগরের অধিকাংশ বাসিন্দার মতো সর্বদা পান চেবান তিনিও। কিন্তু সবসময় চলছে তঁার কাজ। মাটির চাতাল, হোগলা দিয়ে আখড়া করেই চলেছেন। অনেকে আবার একটু বেশি মাটির আবদারও করছেন তঁার কাছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কমবেশি পাঁচশো টাকা করে নেন এই আখড়া তৈরিতে। শেখ মহম্মদ বলেন, ‘সাগরমেলার পাশেই বাড়ি। একসময় বাবার হাত ধরে আসতাম। তারপর বাবার সঙ্গে এই কাজ করেছি। এখন বাবা অসুস্থ। তাই দশ বছর ধরে নিজে করছি। এই আখড়া বানিয়ে খুব ভাল লাগে। ধর্ম নিয়ে কেউ ভাবে না। আমিও ভাবি না।’
এক নাগা মহন্ত মামেলেশ্বর গিরির আখড়া বানিয়ে দিয়েছেন শেখ মহম্মদ। তিনি জানালেন, ‘বংশ পরম্পরায় এই কাজ করে আসছেন ওঁরা। একসময় ওঁর বাবা তৈরি করে দিত। এখন ছেলের ওপর দায়িত্ব পড়েছে। আমরা সাধুরা সনাতন ধর্মে বিশ্বাস করি। যার কোনও আকার নেই। সবই নিরাকার। ধর্মের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এই মেলা। পরম্পরাতে তাই চলছে।’