বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

লেপ-বালাপোষের ইতি বৃত্তান্ত

January 6, 2020 | 2 min read

ছবি সৌজন্যেঃ Natural Bed Company

শীতের লেপ এক আলাদা নস্ট্যালজিয়া। ছুটির দিনে লেপের মধ্যে গুটিশুটি মেরে দিবাঘুম। আহা! এর থেকে ভালো কিছু হয়তো হয়-ই না রবিবারে লেপমুড়ি দিয়ে বারান্দায় বসে রোদের দিকে পীঠ করে গল্পের বই পড়া – সে যেন এক আলাদা রূপকথা। লোডশেডিং-এ মোমবাতি জ্বালিয়ে লেপের তলায় ভূতের গল্প পড়তেও এক অদ্ভুত রোম্যান্টিসিজম। এক কথায় বাঙালির সাথে লেপের সম্পর্ক প্লেটনিক। কাঁথা, কম্বল, লেপ, বালাপোষ – সুখের ভিন্ন নাম।

আগে বাড়ি বাড়ি ধুনকর এসে লেপ বানিয়ে যেত। সেই তুলো ওড়ানোয় এখনো লুকিয়ে আছে ছেলেবেলা। পুরনো ছেড়া কাপড় দিয়েও যে শিল্প করা যায় তা দেখা গিয়েছিল তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায়। ছেড়া পুরনো কাপড় দিয়ে বানানো কাঁথা, তার ওপর রংবেরঙের সুতো দিয়ে পটু হাতের নক্সা করা সেলাই। বলা হত নক্সি কাঁথা। অসাধারন এই শিল্প তখন প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে। কাঁথার ওপর নক্সা করা হত বিভিন্ন রকমের। জসীমুদ্দিন ও তার কবিতা ‘নক্সি কাঁথার মাঠ’ –এ এই নক্সি কাঁথার কথা বলে গেছেন।

এরপর আসা যাক বাংলার নবাবি বালাপোষের কথায়। তৎকালীন বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার মুঘল অধিপতি সুজাউদ্দীনের অনুরোধে খলিফা রামজান শেখ আতির খানকে দিয়ে তৈরী করালেন শালের মতো অথচ আরো গরম গায়ে দেওয়ার মতো একটি আবরণ। মুর্শিদাবাদের একেবারে নিজস্ব এই শিল্পের নাম ছড়ালো সর্বত্র। লম্বা আঁশের কার্পাস তুলোকে বীজ ছাড়িয়ে লাল রঙ্গে চুবিয়ে শুকিয়ে ভরা হতো মোলায়েম সিল্ক এবং মখমলের মধ্যিখানে। সুগন্ধের জন্যে দেওয়া হত আঁতর। বালাপোষের বিশেষত্ব হল মাঝে কোন সেলাই থাকবে না। চার পাশের সেলাই ধরে রাখবে তুলোকে। কুলীন বালাপোষের ওজন দেড় পোয়ার বেশি হবে না।

ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প বাংলা ধীরে ধীরে হারাতে বসেছিল। ‘বিশ্ব বাংলা’ ব্রান্ডের প্রয়াসে এই শিল্প পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। বাংলায় প্রায় হারিয়ে যাওয়া এইসব শিল্পকে ‘বিশ্ব বাংলা’ বিপনী তুলে ধরেছে বিশ্বের বাজারে। বাংলার ঐতিহ্যকে বাচিয়ে রাখার জন্যে তাদের প্রয়াসে বাংলা আবার ফিরে পাচ্ছে তার হারানো গৌরব।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Blanket, #Quilt

আরো দেখুন