মুছে গেল বর্ধমানের ইতিহাস
গত ৪ঠা জানুয়ারী রাতে আচমকা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বর্ধমান স্টেশনের প্রবেশ পথের ঝুলবারান্দা, ঐতিহ্যের স্মৃতিঘেরা খিলান। চোখের সামনে সেই রাতের বর্ধমান শহর দেখল ১৬৫ বছরের ইতিহাসের সাক্ষীর মুছে যাওয়া। দুদিন বাদেও তাই শহর থেকে গোটা জেলার প্রান্তরে-প্রান্তরে ক্ষোভ, আফশোসের বহিঃপ্রকাশ। মেরামতি না করে কেন ম্যুরালে মোড়া হচ্ছিল ভবনের প্রবেশপথ? আফশোস, যদি আগেভাগে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে দাওয়াই দিয়ে সৌন্দর্যায়ন হত, তাহলে এভাবে একটা ঐতিহ্য ধংস হয়ে যেত না।
অধ্যাপক, সমীক্ষক, গবেষক, সমাজকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই ঘটনায় রেলের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলছেন। অভিযোগের সারবত্তা মিলল, ঘটনাস্থলে গিয়ে। সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের জন্য বিশাল বিশাল থামের প্লাস্টার খসানো হচ্ছিল। তারজন্য ড্রিল ব্যবহার করা হচ্ছিল। ফলে থামের ইটে অনবরত আঘাত লাগছিল। সেজন্য নির্মাণ কমজোরি হয়ে পড়ে। “স্টেশনের গায়েই বর্ধমান-কাটোয়া রোড দিয়ে গাড়ি গেলেই কাঁপত থামগুলি।’ বলছিলেন বর্ধমান স্টেশনে ৩৫ বছর ধরে পেয়ারা বিক্রেতা। এই স্টেশনের এক রিকশাওয়ালা বলছিলেন, “মালগাড়ি গেলেও স্টেশনের বিল্ডিংগুলো কাঁপত।”
বর্ধমান ইতিহাস ও পুরতত্ব চর্চা কেন্দ্রের সম্পাদকের দাবী, “এই প্রবেশদ্বারটি-সহ লাগোয়া ভবনটি ১৮৫৫ সালের তৈরী। তখন নির্মাণের কাজ হত চুন-সুরকি দিয়ে। সাম্প্রতিক কালে যখনই কোনও সংস্কারের প্রয়োজন হত, সিমেন্ট দিয়ে কাজ করা হত। চুন-সুরকির সঙ্গে সিমেন্ট খাপ খায় না। তাই সংস্কার হত অর্থহীন।” স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল বড় বড় স্তম্ভের উপরে ফাটল ঢাকতে পিচ-ঢালাই দেওয়া হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাখ্যা, এই ঢালাই দিয়ে জল চুইয়ে ভেতরের ইট, কাঠ এবং লোহা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সৌন্দর্যায়নের জন্য টাইলস বসানোর ভার সহ্য করতে না পেরেই বিপত্তি।