ফিরে এসো শৈশব – গ্রাম বাংলার খেলাধুলো
কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন, ট্যাব, ভিডিও গেমস ধীরে ধীরে গ্রাস করছে শৈশব। আজকের দিনের বাচ্চাদের পড়াশোনার বাইরের পুরো সময়টাই অধিকার করে বসে আছে এইসব ইলেকট্রনিক গ্যাজেটগুলি। বাচ্চা না খেলে, বা কাঁদলে খুব সহজ সমাধান হিসেবেই আমরা তাদের হাতে তুলে দিই স্মার্ট ফোন। এতে বাবা মার ঝক্কি কিছুটা কমলেও বা সময় কিছুটা বাঁচলেও তাদেরকে ভবিষ্যতকে আমরা ঝুকির মুখে ফেলে দিচ্ছি না তো!
আজকের দিনের বেশির ভাগ বাচ্চাই জানে না মাঠে-ঘাটের খেলা। ঘরে একা একা বসে থেকে বাড়ছে মানসিক- শারীরিক সমস্যা, কমে যাছে মানুষের সাথে মেশার প্রবনতা। বাড়ছে মানসিক অবসাদ। আগে বিকেল মানেই নিয়ম করে দল বেধে খেলতে যাওয়া। গ্রাম বাংলার সেইসব খেলাগুলি শুধু খেলাই ছিল না, ছিল মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। শিশুদের বিকাশ এবং মেশার প্রবনতা বাড়ে খেলা-ধুলো করলে।
ছেলেবেলার সেইসব খেলাগুলোর স্মৃতিচারণ করে নেওয়া যাক একবার:
রুমাল চোর
রুমাল চোর এই খেলাটায় লেগে রয়েছে ৯০ এর দশক পর্যন্ত জন্মানো সবার ছেলেবেলা। গোল করে চোখ বন্ধ করে বসে রুমাল নিয়ে খেলা হত। এই খেলা ছিল বন্ধুত্বের উজ্জাপন। যত বন্ধু তত বড় গোল, তত মজাদার হত খেলা।
কুমির ডাঙ্গা
একজন অপেক্ষাকৃত নীচু জায়গায় থেকে বাকিদের যেত ছুঁতে। যেই কেউ একটু নীচে নামলো। ব্যাস আর রক্ষে নেই তাকে ছুঁয়ে নিলেই সে আউট। অনেক বন্ধুদের নিয়ে এই খেলাও শৈশবকে করে তুলত আরও অনেক বেশি রঙিন করে।
হাডুডু
জাতীয় স্তরেও খেলা হয় এই খেলা। কিন্তু পাড়ার খেলায় মটেই মানা হতো না জাতীয় স্তরের কোন নিয়ম। যে যত ভালো দম ধরে রাখতে পারবে সে তত ভালো খেলবে। শরীরের জন্যে অতন্ত ভালো এই খেলাগুলো একরকম হারিয়েই গেল রোজকার জীবন থেকে।
ব্রতচারী
খেলার সাথে এটা ছিল শরীর চর্চাও। বিভিন্ন আসনের মতো করে খেলা হত এই খেলা। বাংলার সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গও বটে।
দাড়িয়াবান্ধা
১০-১৪ জন মিলে খেলা হত এই দাড়িয়াবান্দা। হার জিত মিলিয়ে সবাই মিলে খুব আনন্দ করে খেলা হত এইসব খেলাগুলি। প্রায় সব এলাকার শিশুরাই এ খেলাটি খেলতে পছন্দ করে। ছেলে, মেয়ে, এমনকি বড়দেরও এ খেলায় অংশ নিতে দেখা যায়।
চু কিতকিত
পাড়ার ছোট থেকে বড়, আনন্দে অবসরের এক অনন্য সঙ্গী কিতকিত খেলা ৷ স্কুল থেকে ফিরেই হোক বা লম্বা ছুটিতে এক আলাদা তৃপ্তির অন্যতম নাম কিতকিত খেলা ৷
লুকোচুরি
বড় একটা জায়গায় একজন খুঁজবে বাকিরা লুকোবে চোরই খুজবে সবাইকে যাকে আগে খুঁজবে সেই হবে লুকোচুরির চোর ৷ ঘুরে ফিরে বারেবারে চোখের সামনে ভেসে ওঠে শৈশব ৷
ডাংগুলি
বাংলার একটি জনপ্রিয় খেলা। দুই থেকে পাঁচ-ছয়জন করে দুই দলে বিভক্ত হয়ে এটি খেলতে পারে। দেড় হাত লম্বা একটি লাঠি এবং একটি শক্ত কাঠি (গুলি)। ক্রিকেট খেলার সঙ্গে ডাংগুলি খেলার অনেকটা মিল আছে।
পিট্টু
‘পিট্টু -উ –পিট্টু-উ — পিট্টু-উ’। এক সময় কচিকাঁচাদের গলায় ওই শব্দে মুখরিত হয়ে উঠত গ্রামগঞ্জের অলিগলি। খেলার জন্য প্রয়োজন ছোটাছুটি করার মতো পরিসর যুক্ত জায়গা। স্থানাভাবে পাড়ার রাস্তাতেও ছেলেমেয়েদের ওই খেলায় মেতে উঠতে দেখা যেত। ৮/১০ জন করে সমান সংখ্যক খেলোয়াড় বিশিষ্ট দুটি দলে ওই খেলা হয়।
কানামাছি
গ্রামীণ বাংলার খেলাধুলার মধ্যে কানামাছি খুবই জনপ্রিয়। এ খেলায় কাপড় দিয়ে একজনের চোখ বেঁধে দেয়া হয়, সে অন্য বন্ধুদের ধরতে চেষ্টা করে। যার চোখ বাঁধা হয় সে হয় ‘কানা’। অন্যরা ‘মাছি’র মতো তার চারদিক ঘিরে “কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তারে ছো” বলতে বলতে তার গায়ে টোকা দেয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় সে অন্যদের ধরার চেষ্টা করে। সে যদি কাউকে ধরতে পারে এবং বলতে পারে তার নাম তবে ধৃত ব্যক্তিকে কানা সাজতে হয়।
ফিরে আসুক এইসব গ্রাম বাংলার খেলা ধুলো বাঁচিয়ে দিয়ে যাক শৈশব।