দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

পাখি বেড়েছে দ্বিগুণ, খুশির হাওয়া সাঁতরাগাছিতে

January 10, 2020 | 2 min read

ছবি সৌজন্যেঃ flickr

পরিযায়ী পাখি আসার প্রাকমুহূর্তে বুলবুলে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল সাঁতরাগাছি ঝিলের মাঝে কচুরিপানার ছোট দ্বীপগুলি। অতিথি হাঁসদের বিশ্রাম নেওয়ার ওই জায়গাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল পাখিপ্রেমীদের। যদিও নতুন বছরের গোড়াতেই তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছে। স্থানীয়-পরিযায়ী এবং বিদেশি পাখির দল ভিড় জমিয়েছে ঝিলে।

একদিকে, ঝিলের একাংশ জবরদখল ও জল দূষণ। অন্যদিকে ঝিলের চারপাশে উঁচু উঁচু বাড়ি আর মোবাইল টাওয়ার। কিন্তু পাখি না-আসার সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিয়ে সোমবার সাঁতরাগাছি ঝিলে দেখা মিলেছে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি পাখির। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে কচুরিপানায় ভরা ঝিলে বসতে না-পেরে ফিরে গিয়েছিল বহু পাখি। সে বার পাখি কলকাতার পাখি পর্যবেক্ষক সংস্থা প্রকৃতি সংসদের সদস্যদের সুমারিতে ২,৮৮৯টি পাখির উপস্থিতি নথিভুক্ত হয়েছিল। এ বছর পাখি বাড়তে থাকায় স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এবং পাখিপ্রেমীরা প্রতিদিন বাইনোকুলার বা ক্যামেরা হাতে ভিড় করছেন ঝিলের পাড়ে। 

প্রকৃতি সংসদের তরফে আগামী ১৮-১৯ জানুয়ারি সাঁতরাগাছি ঝিলের পাখি গণনা এবং স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের পাখি চেনানোর শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। সংস্থার সভাপতি কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘সাঁতরাগাছি পাখিরালয়ে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি পাখি এসেছে বলে আমরা প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি। তার প্রধান কারণ দূষণ আগের থেকে কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি, আগে কচুরিপানায় ভরে যাওয়ায় যেখানে পাখিদের ঝিলে বসতে অসুবিধা হয়েছিল। সেই সমস্যা এবারে নেই। তবে এর আগে ঝিলে পুরো কচুরিপানা সাফ করার ফলেও পাখি কমে গিয়েছিল। কোনও জলাশয়ে ৩০% কচুরিপানা থাকলে, তা হাঁসজাতীয় পাখিদের জন্য আদর্শ।’

গত ৫ই জানুয়ারী হাওড়ার শ্যামপুরের সিদ্ধেশ্বরী মহাবিদ্যালয়ের ইকো ক্লাবের সদস্যেরা বনদপ্তরের সহযোগিতায় ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ঘুরে গেল সাঁতরাগাছি পাখিরালয়। নেতৃত্বে ছিলেন প্রকৃতির সংসদের সদস্য প্রসেনজিৎ দাঁ। তিনি বলেন, ‘এ দিনের হিসেবে প্রায় ১৬টি প্রজাতির ৫,৬৯৪টি পাখি মিলেছে। তবে এ বছর পাখির সংখ্যা বাড়লেও পরিযায়ীরা এসেছে একটু দেরিতে। অন্য বছর যখন নভেম্বরের শেষ থেকে পাখি আসা শুরু করে এবারে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বেশিরভাগ পাখি এসেছে। তবে সাইবেরিয়া থেকে আগত নর্দান পিনটেল প্রজাতির হাঁস এ বছর দেখা যায়নি। আবার স্থানীয় প্রজাতি গ্রে হেরন দেখা গিয়েছে।’

গত ৬ই জানুয়ারী সাঁতরাগাছি ঝিলে পাখি দেখতে এসেছিলেন দীপান্বিতা বসু। তিনি বলেন, ‘আগের বছর যেভাবে পাখি না-আসায় হতাশ হয়ে ফিরে গিয়েছিলাম। এ বছর খুব ভালো লাগছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখে। সারা দিনটা ছেলেকে নিয়ে পাখি দেখে বেড়ালাম।’

হাওড়া বন দপ্তরের রেঞ্জ অফিসার সমীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পাখি বেশি আসার কারণ হিসেবে মনে হচ্ছে, পরিবেশ দূষণ কিছুটা কমেছে। আমাদের ধারণা, এ বছর পাখির সংখ্যা আরো বাড়বে। এলাকার মানুষ দূষণ নিয়ে কিছুটা সচেতন হয়েছে। সেই সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। ইতিমধ্যেই রাজ্য জীববৈচিত্র পর্ষদ ঝিলকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরাও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Santragachi, #Migratory Bird

আরো দেখুন