ভ্রমণ বিভাগে ফিরে যান

মাতলার ধারে সবুজঘেরা গ্রাম

January 11, 2020 | 2 min read

ছবি সৌজন্যেঃ flickr

আজ এক নতুন অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করি। ধরে নেওয়া যাক রাজ্যের শেষ প্রান্তটা ছুঁয়ে আসতে মন চাইছে, তবে চেনা সুন্দরবন নয়। দু’দিনের পড়ে পাওয়া ছুটিটা কাজে লাগিয়ে একেবারে অন্য রকম কোন জায়গা। । এমন কোথাও, যেখানে বড় একটা যায় না কেউ।

রাজপুর-সোনারপুর-বারুইপুর পেরিয়ে তার পরের রাস্তা গুগল ম্যাপ ছাড়া শহুরে চোখে অভ্যস্ত নয়। দক্ষিণ বারাসত পেরিয়ে জয়নগর আসতেই মোয়ার গন্ধে মন আনচান। সেসব ছেড়ে এগিয়ে গেলাম বাঁয়ে, কুলতলির দিকে। কৈখালি কাছারি বাজার পেরোনোর পরে খেয়াল করলাম, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বলতে রাস্তায় চলছে শুধু টোটো আর ট্রেকার। তা-ও সংখ্যায় খুব কম। বাসরাস্তা ছেড়ে এসেছি অনেক আগেই।

স্কুলের উঠোন, মসজিদের গেট, পুকুরপাড়ের সামনে দিয়ে আঁকাবাঁকা মসৃণ রাস্তা এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণে। কোনও বাড়ির দাওয়ায় উপুড় করে শুকোতে দেওয়া হয়েছে মাটির সরা, মালসা। মোড়ের চায়ের দোকানে চলছে শীতের সকালের আড্ডা। কলকাতা ছাড়ানোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গ্রাম বাংলার এমন রূপ সত্যিই ভাবা যায় না।

পিচ রাস্তা ছেড়ে দু’চাকা চলতে শুরু করল আল বেয়ে। দু’পাশে ধানখেত। খানিক এগোনোর পরে থামলাম এক মস্ত দরজার সামনে। মাধবীলতা জড়ানো গেটের পাশে একটি হোমস্টে। প্রকৃত অর্থেই সবুজে ঘিরে থাকা এক টুকরো থাকার জায়গা। সামনেই পুকুরে ফুটে থাকা শাপলা, বাগান জুড়ে গাছগাছালি আর পাখি। তারই একপাশে থাকার দু’টি মাত্র ঘর। হাঁস চরে বেড়াচ্ছে বাগানের সবুজ চিরে, আশপাশটা একেবারে নিঝুম।

প্রকৃতির নৈঃশব্দ্য টের পাওয়া যায় সন্ধে নামার মুখে। গাছপালার আবরণ সরে যেতেই চোখের সামনে বেরিয়ে পড়ল মাতলা নদী। শীতকাল, তাই গর্জন কম। শান্ত স্রোতস্বিনী বয়ে যাচ্ছে কুলকুল করে, চোখেই পড়ছে না ওপার। এখান থেকেই ম্যানগ্রোভের শুরু। সুন্দরবনের ছোঁয়া রয়েছে জায়গাটায়।

পরদিন মাতলার ধারে যেতেই দেখি, ডিঙি তৈরি। দাঁতন করতে করতেই লগি ঠেলতে শুরু করলেন মাঝি। জলে সবে কমলা রং ধরতে শুরু করেছে।, ওপারটা ঝড়খালি। টাইগার রেসকিউ সেন্টার ঘুরে আসা যায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই। এক পাশে অজস্র খাঁড়ি, তারই একটায় ঢুকে গেলাম আমরা। এখানে সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, হেতালের জঙ্গল খানিক ঘন হতে আরম্ভ করেছে। বার্ড ওয়াচিংয়ের জন্যও যে জায়গাটা আদর্শ, সেটাও মালুম হল নৌকা সফরে গিয়েই।

গোটা গ্রাম জুড়েই কাঁকড়া, চিংড়ির ফার্মিং চলে। হোম স্টে লাগোয়া পুকুর থেকে কাঁকড়া ধরা দেখতে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমরা। হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে টোপ আর জাল দিয়ে চলছে কাঁকড়া ধরা। বালতি ভরে উঠে এলো ছোট-বড়-মাঝারি সাইজ়ের কাঁকড়ায়। গাছ থেকে ছোট একটা ডাল ভেঙে গুঁজে দেওয়া হল বালতিতে, যাতে একে অন্যের সঙ্গে মারামারি করতে না পারে কাঁকড়াগুলো। তারপর দুপুরে কাঁকড়ার ঝোল আর ভাত খেয়ে বিকেলে ফেরার তোড়জোড় শুরু।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Sunderban, #Matla, #Travelling, #West Bengal

আরো দেখুন