দেশ বিভাগে ফিরে যান

নাগরিকত্ব – প্রতিবাদে হাতেখড়ি বহু পড়ুয়ার

January 11, 2020 | 2 min read

ছবি সৌজন্যেঃ telegraphindia

ওদের কেউ সদ্য এককুড়ি। কারও বয়স কিছুটা বেশী। নানা ঘটনায় ওদের মাথা গরম এর আগেও হয়েছে, কিন্তু এতদিন প্রতিবাদ আটকে ছিল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। নাগরিকত্ব বিল, জামিয়া মিলিয়া, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা আর ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। অনেক কলেজ পড়ুয়াই প্রথমবার তাই পথে নেমে প্রতিবাদে।

ছেলেটার হাতে পোস্টারে লেখা, ‘সরফরোশি কী তমন্না অব হমারে দিল মে হ্যায়, দেখনা হ্যায় জোর কিনতা বাজুয়ে কাতিল মে হ্যায়’ মুখে স্লোগান, ‘বোল রে সাথী, হল্লা বোল।’ বেথুন কলেজের ইকনমিক্সের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া সোলাঙ্কি ছাত্র রাজনীতি করেন না, মিছিলেও পা-ও মেলাননি। সেই মেয়েটাই বাড়িতে ঘুম থেকে উঠে জানিয়েছিল, মিছিলে হাঁটব আজ। বাড়ির লোকেরকেনর উত্তরে সে বলে, ‘আজ নয় তো আর কবে? আর কত দিন পর? অর্থনীতির ছাত্র হওয়ায় জানি, দেশের অবস্থা কতটা খারাপ। মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসে দাঁড়িয়েছে নাগরিকত্ব বিল। ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। প্রত্যেকটা মানুষের পথে নেমে প্রতিবাদ করা উচিত। যাতে শাসকদল বোঝে, ওরা যা ইচ্ছা করতে পারে না।’

যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা দেশ-বিদেশের নানা ঘটনায় প্রতিবাদ আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকে, সেই প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত তিন বছর ধরে পড়াশোনা করেও মিছিলের ছোঁয়াচ এড়িয়েছিলেন ডোমজুড়ের সোমনাথ বালি। বর্তমানে ন্যানো মেটিরিয়াল নিয়ে গবেষণা করা, রসায়নের এই ছাত্র গত এক মাসে দু’বার মিছিলে পা মিলিয়েছেন জামিয়া মিলিয়ার পড়ুয়াদের উপর পুলিশি হামলা আর নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আর দ্বিতীয়বার, জেএনইউতে পড়ুয়াদের উপর হামলার ঘটনার পর। তাঁর বক্তব্য ‘আমার বাড়িটা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায়। নাগরিকত্ব আইন পাশের পর থেকে বুঝতে পারছি চারপাশে উত্তেজনা বাড়ছে। আমার কাছে প্রাইভেট টিউশন পড়ে, বাচ্চা বাচ্চা ছেলেগুলোর মধ্যেও পরিবর্তন দেখছি। দেখে মনে হল, ঘরে বসে থাকাটা অন্যায় হবে। তাই হেঁটেছি মিছিলে’।

সেন্ট জেভিয়ার্সের কম্পিউটার সায়েন্সের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া ইন্দ্রনীলের ইচ্ছা ছিল জেএনইউতে ভর্তি হওয়ার। সেটা হয়নি বটে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য দুর্বলতা থেকে গিয়েছে। ইন্দ্রনীলের কথায়, ‘একটা সময় ভাবা হত, জেএনইউতে ঢুকেছে মানে কেরিয়ার নিশ্চিত। কিন্তু, এখন তো সেখানে ঢুকলে প্রাণটাই নিশ্চিত নয়।’ সেন্ট জেভিয়ার্সের পড়ুয়ারা রাজপথে নেমে যে মিছিল করেন সম্প্রতি, তার অন্যতম আয়োজক ছিলেন ইন্দ্রনীল। তিনি বলছেন, ‘জামিয়া, জেএনইউতে পড়ুয়ারা যে ভাবে মার খেয়েছে, সেটা দেখার পর একজন ছাত্র হিসেবে ঘরে বসে থাকি কী ভাবে? আজ ওদের হচ্ছে, কাল তো ওদের জায়গায় আমরাও থাকতে পারি’।

প্রথমবার মিছিলে হাঁটা পড়ুয়াদের অনেকেই দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া’র সঙ্গে তুলনা করছেন। যেমন, মৌলানা আজাদ কলেজের জীববিদ্যার ছাত্র আসিফুর। বসিরহাটের আসিফুরের বক্তব্য, ‘বিশ্বাস করুন, আমার ধর্মের কারণে নয়। ভারতবাসী হিসেবে সবার সঙ্গেই আমার নিজেরও অস্তিত্ব বিপন্ন বলে মনে হয়েছে। তাই পথে নেমে প্রতিবাদই শ্রেয় মনে করেছি।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#CAA Protest, #JNU VIOLENCE

আরো দেখুন