প্রথম ঝলকে বিজ্ঞাপন, পরের ঝলকে ‘মিম’
নিখাদ বিজ্ঞাপন। ব্র্যান্ডের নাম, ছবি, প্রাসঙ্গিক বার্তা সবই আছে। কিন্তু সঠিকভাবে বিজ্ঞাপনের ‘মতো’,কিন্তু, বাস্তবে ‘মিম’। চেনাজানা ব্র্যান্ডের নাম দিয়ে ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার অফিসিয়াল নাম ধার করা না-হলেও ব্র্যান্ডের চেনা থিম কাজে লাগানো হয়েছে। সাম্প্রতিক মূলত কেন্দ্রবিরোধী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেগুলো প্রাসঙ্গিক। সংশ্লিষ্ট সংস্থা জানিয়েছে, এসবের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। তবে এ জন্য কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার পথে যেতেও অনীহা তাদের।
কন্ডোম-সহ অন্যান্য পণ্য প্রস্তুতকারী একটি সংস্থার নাম ও ছবি ব্যবহার করে গত ক’দিনে এমন দু’টি ‘মিম’ ঘোরাফেরা করছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে। উল্লেখ করা না-হলেও একটির বিষয়বস্তু গত রবিবার জেএনইউ ক্যাম্পাসে হামলা ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা। সেটিতে লেখা – বেটার প্রোটেকশন দ্যান দিল্লি পুলিশ। দ্বিতীয়টার বার্তা আরও কড়া। কন্ডোমের প্যাকেটের ছবি দিয়ে লেখা – এখনও যাঁরা বিজেপিকে সমর্থন করছেন, তাঁরা দয়া করে এটা ব্যবহার করুন। আপনাদের মতো আর কাউকে আমরা এই পৃথিবীতে চাই না। অন্য একটিতে আবার বিখ্যাত দুগ্ধজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারী সংস্থার বিখ্যাত বিজ্ঞাপনের ঢঙে লেখা – অমিত, দ্য ওয়েস্ট অফ ইন্ডিয়া। পাশে অমিত শাহর আদলে ছবি।
কিন্তু এর কোনওটাই ওই সব সংস্থার বিজ্ঞাপন নয়। ব্র্যান্ডের কন্ডোম-সহ অন্যান্য পণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থার এক কর্তা টেলিফোনে বলেন, ‘আমিও এগুলো দেখেছি। কিন্তু এর সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই। সংস্থার অফিসিয়াল পেজে এমন কিছুর কোনও উল্লেখ পাবেন না।’ তা হলে কি যিনি বা যাঁরা এ সব তৈরী করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে? ওই কর্তার জবাব, ‘না। যে কেউ যেমন খুশি মিম তৈরী করতে পারেন। আমরা আটকাব কী করে?’
পেশাদার মিম প্রস্তুতকারীরা অবশ্য বিষয়টাকে খুব একটা ভালো ভাবে দেখছেন না। তেমনই একজনের কথায়, ‘সাধারণত কোনও বিষয়কে মানুষের সামনে তুলে ধরতে মিমে কিছু ছবি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুরো বিজ্ঞাপনের মতো মনে হচ্ছে। ব্র্যান্ডের নাম ও ছবি অন্যরকম ভাবে ব্যবহার করা হলে ভালো হত।’
বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থার বক্তব্য, এ ভাবে কোনও সংস্থা রাজনৈতিক বার্তা-সহ বিজ্ঞাপন দিতে চাইবে না। একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার অন্যতম কর্তা সৌভিক পয়রা বলেন, ‘একবার একটা বিজ্ঞাপনে পতাকা ব্যবহার করার কথা বলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থা আমাদের সতর্ক করেছিল, তার সঙ্গে যেন কোনও রাজনৈতিক দলের যোগ না মেলে। এমন বিতর্কে কেউ যেতে চাইবে না। আমরাও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকি।’ বিজ্ঞাপন সংস্থা ও অ্যান্ড এম-এর এক কর্তাও জানান একই কথা।
বিজেপি অবশ্য এ সব নিয়ে বিচলিত নয়। তবে এনআরসি-সিএএ, জেএনইউয়ের মতো সাম্প্রতিক নানা ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ স্পষ্ট। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার আঁচ ভালো ভাবেই মালুম হচ্ছে। তার মধ্যে এ সব বার্তা কী ভাবে দেখছে বিজেপি? রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির সদস্য শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘অস্থিরতা, উত্তেজনা সাময়িক। সত্য প্রতারিত হতে পারে। কিন্তু পরাজিত হতে পারে না।’