পাহাড়-চা বাগান-নদী ঘেরা অজানা উত্তরবঙ্গ
সৌরিণী চা-বাগান
মিরিক থেকে মাত্র ৬ কিমি সৌরিণী চা বাগান। নীল আকাশের নীচে সুউচ্চ টিলার মাঝে সবুজ মখমলি চা-বাগানের ঢেউ। সৌরিণী মোড় থেকে বাঁ দিকে রাস্তাটা গোল চক্কর কেটে অনেকটা নীচে নেমে গিয়েছে। ডাইনে উঁচু টিলায় চা-বাগান। বামে গোলাকৃতি ঢালে মাথা চাড়া দিয়েছে দু’টি পাতা, একটি কুঁড়ির এক সাজানো ভ্যালি। কাচ্চি সড়কের শেষে সুন্দর এক হোমস্টে। হোমস্টে লাগোয়া দু’একর জমিতে নানান রাসায়ানিক সারমুক্ত ফসল। আলু, শিম, বাঁধাকপি, স্কোয়াশ, টোম্যাটো সমেত হরেক মরসুমি ফল। শীতে কমলালেবুতে ভরে যায় বাগান। ইচ্ছে হলেই বাগান থেকে নিজেদের পছন্দমতো সব্জিও তুলতে পারেন অতিথিরা। অরগানিক ফার্ম, তাই প্রচুর পাখিও আসে। বার্ডওয়াচারদের স্বর্গ বললেও ভুল হবে না।
কোথায় থাকবেন:
সৌরিণীতে থাকার জন্য রয়েছে রাজ্যেশ্বরী হোমস্টে, ৬টি ডাবল বেডরুম রয়েছে
যোগাযোগ – ০৯৯৩২৩১৭২৯৯
ভাড়া – জনপ্রতি ১২০০ টাকা, থাকা-খাওয়া সমেত।
এরা নিরামিষভোজী, তাই অতিথিদের জন্য নিরামিষ আয়োজন। তবে যাঁরা আমিষ খান, তাঁদের নিরাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। সে ক্ষেত্রে আলাদা জায়গা রয়েছে। আদিবাসী নৃত্যর খরচ আলাদা।
তামসাং
ছুটি কাটানোর ঠিকানা যদি হেরিটেজ বাংলো আর সঙ্গে অনুপম চায়ের বাগান হয়ে থাকে তা হলে কেমন হয়? সোজা চলে আসুন দার্জিলিংয়ের পথে। ঘুম স্টেশন থেকে ডাইনে ঘুরেই ঘুমভঞ্জন। পাইনের ঘন বন পেরিয়ে মেরিবং গোম্বা মোড় থেকে রাস্তা দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। তার একটি চলে গিয়েছে তামসাং চা-বাগানের দিকে। এখান থেকে মাত্র ২ কিমি গেলেই তামসাং চা-বাগানের হেরিটেজ বাংলো।
বাংলোর সামনে বিশাল লনে নরম সবুজ ঘাসের গালিচা বিছানো। আকাশ পরিষ্কার থাকলে সামনের উন্মুক্ত আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘার হাসিমুখ দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে সময় কেটে যাবে তা টের পাবেন না। বাংলোর দুই প্রান্তে দু’টি বিশাল ক্যামেলিয়া গাছ। শীতে মরসুমি ফুলের বাহারে ভরে ওঠে বাগানের চারপাশ। একতলায় একটি, কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় তিনটি বিশাল ঘর। মোট চারটি ঘর।
কোথায় থাকবেন:
তামসাং-এ থাকার ঠিকানা তামসাং টি রিট্রিট। হেরিটেজ বাংলোর চারটি ঘর। ভাড়া দু’জনের জন্য ৯,০০০ টাকা। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার-সহ। কর আলাদা। নদীপাড়ের পিকনিক, পিক-আপ ড্রপের খরচ আলাদা।
যোগাযোগ chamongchiabari.com
লামাগাঁও
পাহাড়ের এক অচিন গ্রাম লামাগাঁও।। চার দিকে সবুজের রাজপাট। কোথাও ধাপচাষ, কোথাও পাহাড়ের গায়ে সাঁটা ছোট ছোট গ্রামের বাড়ি, লাল-নীল ইউনিফর্ম পরা স্কুলছুট শিশুদের বাড়ি ফেরার হুটোপাটি, আবার কোথাও অরগানিক ফসলের বাহার। বিজনবাড়ি থেকে ১২ কিমি ছবি আঁকা পথ।
আপাত নির্জন গ্রামে একমাত্র থাকার ঠিকানা লামাগাঁও হোমস্টে। পিচ রাস্তার একপাশে হোমস্টে আর এক দিকে ধাপে ধাপে নেমে গিয়েছে গভীর খাদ। সেই ধাপে নানান অরগানিক ফসলের চাষ। খাদের ও পাশে মেঘের সমুদ্র। আর তারই ও পারে পাহাড়ের ঘেরাটোপ। দার্জিলিং পাহাড়ের প্রায় ৭টি চা-বাগান আর ম্যাল সমেত বেশ কিছু অংশকে দেখতে পাওয়া যায়। খাদের ধারের উন্মুক্ত আকাশের নীচে কাঞ্চনজঙ্ঘার চিরনতুন দৃশ্য শুধুই রংবদলের বিস্ময়। গাছে গাছে পাখিদের মেলা।, অর্কিড আর নানা পাহাড়ি ফুল।
কী ভাবে যাবেন:
শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে এনজেপি। সেখান থেকে গাড়িতে রোহিণী, কার্শিয়াং হয়ে ঘুম ৬২ কিমি। ঘুম থেকে বিজনবাড়ি ২৬ কিমি। এখান থেকে লামাগাঁও ১৩ কিমি। এনজেপি থেকে ভাড়া গাড়িতে যাওয়াই ভালো।
কোথায় থাকবেন:
থাকার জন্য রয়েছে লামাগাঁও হোমস্টে – ৭টি ঘর
যোগাযোগ: ৯৮৩২৬৬৭৫৭০।
ভাড়া – জনপ্রতি ২১০০ টাকা খাওয়া সমেত
মাগুরমারি
পাহাড় থেকে এবার চলে যাওয়া যাক তরাই। উত্তরবঙ্গের গাজলডোবায় অনেকেই গিয়েছেন। খুব কাছেই, চলে যাওয়া যায় গ্রাম পর্যটনের এক নতুন ঠিকানা – ওঁরাও উপজাতির গ্রাম মাগুরমারি। ৩৮টি ওঁরাও পরিবার এই গ্রামে বসবাস করেন। আর এখানেই গড়ে উঠেছে চারটি কটেজ। সবুজে মেশা একেবারে গ্রাম্য পরিবেশ। বেশ কয়েকটি পুকুরে প্রচুর মাগুর মাছ, তাই গ্রামের নাম মাগুরমারি।
গ্রামে ঢুকতেই ওঁরাওদের ট্র্যাডিশনাল পোশাকে, ধামসা-মাদল বাজিয়ে, ফুল ছড়িয়ে অতিথিবরণের প্রথা তাক লাগিয়ে দেবে। জঙ্গলের মাঝে শহরের কোলাহল থেকে নির্জন গ্রাম্য পরিবেশে। ওঁরাওদের প্রথা অনুসারে, অতিথিদের হাত ধুইয়ে দেন আদিবাসী মা-বোনেরা। খাবারের ডিশেও চমক।
সন্ধ্যে নামলেই কালচে নীলাভ আকাশ জুড়ে হাজার তারার ভিড়। বন থেকে মাঝে মাঝেই ভেসে আসে বনচরদের নানান গুরুগম্ভীর শব্দ। সেই রোমাঞ্চের মাঝে, ইচ্ছে হলেই আপনি মেতে উঠতে পারেন ওঁরাওদের সঙ্গে নাচে গানে। এদের নিজস্ব ভাষা কুরুক। এঁরা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন যত্নে।
শীতে মাগুরমারির ঝিলে প্রচুর পরিযায়ীর আনাগোনা। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা নৌকায় চেপে কাঠামবাড়ি জঙ্গলের অন্দরমহলে গাইড-সহ ঢুকতে পারেন। আদিম অরণ্যের গন্ধমাখা রোমাঞ্চকর পরিবেশে প্রায় ১২০ টি প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। ইচ্ছে হলেই ‘মৎস্য মারিব খাইব সুখে’। ট্র্যাডিশনাল নাচে মেতে উঠতে পারেন। এ জন্য অবশ্য ২,৫০০ টাকা আলাদা চার্জ লাগে। দু’-এক দিনের ছুটিতে মাগুরমারি ও তার জঙ্গলমহল নিঃসন্দেহে মন কেড়ে নেবে।
কীভাবে যাবেন:
কলকাতা থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি। সেখান থেকে দূরত্ব ৪৭ কিমি। মাগুরমারির নিকটবর্তী রেলস্টেশন ওদলাবাড়ি। এনজেপি থেকে ট্রেনে দূরত্ব ২১ কিমি। লাটাগুড়ি থেকে ২০ কিমি। গাড়িতেও যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন:
এখানে থাকার জন্য রয়েছে মাগুরমারি ইকো ট্রাভেলার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটির চারটি সুন্দর কটেজ ।
যোগাযোগ: ৯৮৩২৬৬৭৫৭০/ +91-353-2540-809
ভাড়া ১,৫০০ টাকা
খাওয়া-দাওয়া ৪৫০ টাকা জন প্রতি