বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

চন্দ্রাণী-সোমনাথ যেন কোশিশের জয়া-সঞ্জীবকুমার

January 13, 2020 | 2 min read

ছবি সৌজন্যেঃ airtelxstream

ওঁদের মুখে কথা নেই, ওঁদের কানে শব্দ পৌঁছয় না। তবে ওঁদের ভাষা আছে। নিজস্ব ভঙ্গিতে সেই ভাষায় ওঁরা ভাব প্রকাশ করেন।

গুলজারের সেই যুগান্তকারী ছবি ‘কোশিশ’-এর সঞ্জীব কুমার-জয়া ভাদুড়ির কথা মনে করাচ্ছেন কালনার পিয়ারিনগরের পালপাড়ার চন্দ্রাণী আর কলকাতার নারায়নপুরের সোমনাথ। তবে সিনেমায় আরতি (জয়া ভাদুড়ি) ও হরির (সঞ্জীবকুমার) মতো সোমনাথ ও চন্দ্রাণী আগে দু’জন দু’জনকে চিনতেন না। কিন্তু দু’জনেই ঘটনাচক্রে কালনার একই স্কুলের প্রাক্তনী। যে স্কুল বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্নদের। আরও সমাপতন, বিয়ের ক্ষেত্রে দু’জনের ভাবনাও ছিল এক সূত্রে গাঁথা।

মূক ও বধির, বছর উনিশের চন্দ্রাণী নিজের ভাষায় তাঁর মা-বাবাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বিয়ে করবেন তাঁর মতোই কাউকে। আবার বছর ছাব্বিশের মূক ও বধির সোমনাথও ঠিক করেছিলেন, তাঁর স্ত্রী হবেন তাঁর মতোই কেউ। দু’জনের ইচ্ছেকে এক সুতোয় বাঁধলেন দু’জনেরই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। তাঁর উদ্যোগেই আগামী ২৯ জানুয়ারি এক হচ্ছে কালনার পিয়ারিনগরের পালপাড়ার চন্দ্রাণী ও কলকাতার নারায়ণপুরের সোমনাথের চার হাত।

বিয়ের আগাম শুভেচ্ছার পাশাপাশি কালনার আদি বাসিন্দা গোবিন্দ মণ্ডল শনিবার চন্দ্রাণীর হাতে তুলে দেন নিজের তৈরি বিশেষ ডিভাইস সম্বলিত একটি মোবাইল ফোন, যার মাধ্যমে মূক ও বধিররা নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান প্রদান করতে পারেন।

কালনার কৃষ্ণদেবপুরের পিয়ারিনগরের তাঁতের কারবারি চন্দন সাহা তাঁর মূক ও বধির বড় মেয়ে চন্দ্রাণীকে তিন বছর বয়সে ভর্তি করে দেন কালনার বৈদ্যপুরের বিকাশ ভারতী মূক ও বধির বিদ্যালয়ে। ওই স্কুল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। তাই, আরও পড়াতে বছর দুয়েক আগে কলকাতার মানিকতলায় মূক বধির বিদ্যালয়ে তিনি ভর্তি করেন মেয়েকে। চন্দ্রাণী এখন ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বাড়িতে যখন তাঁর জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছে, তখন চন্দ্রাণী মা-বাবাকে বুঝিয়ে দেন, পাত্রকে কিন্তু তাঁর মতোই হতে হবে। চন্দন তখন তাঁর মেয়ের পাত্রের জন্য দ্বারস্থ হন বৈদ্যপুরের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অমরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের। কাকতালীয় ভাবে ওই স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্র সোমনাথ মাঝির জন্য মূক ও বধির পাত্রী খুঁজছিলেন তাঁর পরিবারের লোকজন।

চন্দ্রাণীর বাবা চন্দন সাহা বলেন, ‘পাত্র নামী ই-কমার্স সংস্থার কর্মী। সব দিক দিয়ে খুব ভালো ছেলে।’ সোমনাথের মা পূর্ণিমা মাঝিরও বক্তব্য, ‘যেমন বৌমা চেয়েছিলাম, তেমনই পেয়েছি।’

অমরেন্দ্রনাথবাবুর কথায়, ‘চন্দ্রাণীর বাবা আমাকে অভিভাবকের সম্মান দেন। ক’দিন আগে আমার কাছে এসে চন্দ্রাণীর ইচ্ছের কথা জানালেন। আমি বললাম, ভালো কথা, তবে ক’টা দিন সময় লাগবে। যোগ্য পাত্র চাই তো!’

ইতিমধ্যে সোমনাথের এক মেসো তাঁর কাছে এসে মূক ও বধির পাত্রীর সন্ধান করেন। অমরেন্দ্র বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখলাম, সোমনাথ সুপাত্র। পরিবারও ভালো। দেরি করিনি।’

কথা বলতে বা শুনতে পারা এ ক্ষেত্রে গৌণ। ‘দুই হৃদয়ের নদী একত্র মিলিল যদি…।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Koshish Hindi Movie

আরো দেখুন