প্রযুক্তি বিভাগে ফিরে যান

স্মার্টফোনে রাতভর সিনেমা-সিরিজের নেশায় বিপদ

January 14, 2020 | 2 min read

ছবি অথবা সিরিজ এখন স্মার্টফোনেও। ছবি সৌজন্যেঃ shawacademy

স্কটিশ চার্চ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী দেবাঞ্জলির ক্লাস প্রায় প্রতিদিনই শুরু হয় সকাল ১০টায়। কিন্তু ক্লাসে গিয়ে লেকচার শুনতে শুনতেও তাঁর মন পড়ে থাকে নিজের ঘরের বিছানায়। অনেক সময়ে ক্লাস চলতে চলতেও ঘুমে ঢুলে পড়েন তিনি। চোখের নীচে কালি, মুখে ক্লান্তির ছাপ। আবার এমন নয় যে, দেবাঞ্জলি রাত জেগে পড়াশোনা করছেন।

তা হলে কেন এমনটা হচ্ছে?

দেবাঞ্জলির বক্তব্য, ‘ঘুমটা হচ্ছে না তো!’ কিন্তু কেন? প্রশ্ন শুনে ফিক করে হেসে ফেলেন ১৯ বছরের দেবাঞ্জলি। হাতে ধরা স্মার্টফোনটা দেখান। তার পর মুখে হাসি রেখেই তিনি বলেন, ‘নার্কোসের সিজন থ্রি চলছে। এতগুলো সিজন, এতগুলো এপিসোড। সবই তো ব্রিঞ্জ ওয়াচিং চলছে।’ অর্থাৎ একই রাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পর পর কয়েকটি এপিসোড দেখে নিতেই হবে। দেবাঞ্জলির কথায়, ‘এর আগে স্পাই দেখলাম, তার আগে ফ্যামিলি ম্যান…রাতে ঘুম আর কত টুকু হয়!’ যে দিন দেবাঞ্জলির সঙ্গে কথা হচ্ছিল, সে দিনও তিনি রাতভর ওয়েব সিরিজ দেখার পর সকাল ৬টায় ঘুমোতে গিয়ে ৯টায় উঠেছেন, তার পর তড়িঘড়ি কলেজ যাওয়ার প্রস্তুতি।

বছর তিরিশের অভীক চাকরি করেন শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের প্রকাশনা বিভাগে। কাজ শুরু করতে হয় সকাল সকাল। কিন্তু গত এক মাস ধরে সকালের সব অ্যাসাইনমেন্টে অভীক হয় দেরিতে পৌঁছেছেন কিংবা পৌঁছতেই পারেননি। পরিণাম হল, অফিসে বিস্তর অশান্তি। অভীকেরও সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার সমস্যা। অভীকের কথায়, ‘রাতের পর রাত জেগে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হইচই দেখেই চলেছি।’ তাঁর বক্তব্য, ‘কয়েকটা রাত এমনও হয়েছে যে, মোবাইল বিছানার ধারেকাছে রাখিনি, অথচ ভোর ৫টা পর্যন্ত ঠায় জাগা। এক ফোঁটা ঘুম নেই।’

স্কুল-কলেজের পড়ুয়া কিংবা চাকরিরতদের মধ্যে এমন রাত জেগে ওটিটি-তে সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ দেখা মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে অনিদ্রা রোগ, সেখান থেকে মানসিক-শারীরিক নানা সমস্যা।

২০১৪ সালে নেটফ্লিক্সের করা একটি সমীক্ষা বলছে, দুনিয়া জুড়ে তাঁদের গ্রাহকদের অন্তত ৬০ শতাংশ ব্রিঞ্জ ওয়াচ করেন। অনলাইন স্ট্রিমিং অ্যাপগুলির তরফে এমন কোনও সমীক্ষা ভারতের জন্য আলাদা ভাবে না-করা হলেও এই নেশা যে নাগরিকদের একাংশকে পেয়ে বসেছে, তা অনেকেই মেনে নিচ্ছেন। চিকিৎসকদের মতে, এর ফলে শারীরিক সমস্যা তো বটেই, পর্যাপ্ত ঘুম না-হওয়ায় চাপ বাড়ছে মনের উপরেও। ঠিক মতো কাজ করতে না-পারায় পরিবার, অফিস, স্কুল-কলেজে অন্যদের সঙ্গে খটাখটি লাগছে। অবনতি হচ্ছে সম্পর্কেরও। শরীরে বাসা বাধছে বিভিন্ন লাইফস্টাইল ডিজিজ।

ওটিটি-তে ছবি বা ওয়েব সিরিজ দেখতে হলে বিছানায় স্মার্টফোন নিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে বিছানায় শুয়ে পড়লেই হল। পাশে থাকা মানুষের কানেও শব্দ পৌঁছবে না। অর্থাৎ, সহজেই বিনোদনের স্বাদ। মনোবিদ সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়ের নিদান, ‘অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের জন্য নিজেই নিজের সময় বেধে দিন। আর চেষ্টা করুন, মোবাইলে মুখ না-গুঁজে বন্ধু, আত্মীয়, পরিচিতদের সঙ্গে মুখোমুখি আড্ডা বাড়ান।’

স্লিপ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সৌরভ দাসের বক্তব্য, ‘ঘুম না-হলে বায়োলজিকাল ক্লকের বারোটা বাজে। শারীরিক নানা ব্যাধির জন্ম হয় তার থেকে। রক্তচাপ অনিয়মিত হয়, রোগী উচ্চ রক্তচাপের শিকার হয়ে পড়েন।’ ডায়াবিটিস, ওবেসিটি, স্মৃতিভ্রংশ, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট-সহ বহু ব্যামোর নাটের গুরুও যে আদতে ঘুমের সমস্যা, সেটা মনে করিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

অতএব বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, নার্কোস দেখুন কিন্তু অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের নেশার কবলে পড়বেন না!

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Life Style, #Smart Phones, #Health & Fitness

আরো দেখুন