কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

রবীন্দ্র সরোবরে বিপজ্জনক রাক্ষুসে কচ্ছপ বাড়াচ্ছে দুশ্চিন্তা

January 16, 2020 | 2 min read

এই কচ্ছপ প্রজাতিটি বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। ছবি সৌজন্যেঃ scroll.in

আদতে তারা মেক্সিকো আর আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বাংশের বাসিন্দা। যে কোনও পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আর রংবাহারি চেহারার জন্য ‘পোষ্য’ হিসেবে জনপ্রিয়তা রয়েছে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু আপাত-নিরীহ এই কচ্ছপ প্রজাতিটি বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষত, নতুন পরিবেশে মুক্তির স্বাদ পেলে অচিরেই তারা স্থানীয় প্রজাতিগুলির পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সম্প্রতি রবীন্দ্র সরোবরে তাদের দেখামেলায় আশঙ্কিত বন্যপ্রাণ বিশারদ এবং প্রকৃতিপ্রেমীরা।

বিচিত্রবর্ণের এই কচ্ছপের নাম, রেড ইয়ারড স্লাইডার। কানের পাশে উজ্জ্বল লাল রঙের দাগের কারণেই এমন নাম। কচ্ছপ-পালকদের কাছে ‘নিনজা টার্টল’ নামেও এটি পরিচিত। সম্প্রতি জাতীয় সরোবরে একটি ভাসমান কাঠের গুঁড়ির উপরে তাদের একটিকে ক্যামেরাবন্দি করেন পাখি পর্যবেক্ষক তীর্থঙ্কর রায়চৌধুরী। ওই গুঁড়িতেই কয়েকটি ‘ইন্ডিয়ান রুফ টার্টলে’র সঙ্গে মিলেমিশে রোদ পোহাচ্ছিল সে। সরীসৃপ বিশারদ অনির্বাণ চৌধুরী এবং ‘জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’র সরীসৃপ বিজ্ঞানী কৌশিক দেউটির সহায়তায় বহিরাগত প্রজাতিটিকে তীর্থঙ্কর শনাক্ত করেন। 

অনির্বাণের কথায়, ‘এই প্রজাতির শিশু কচ্ছপগুলির আয়তন একটাকার কয়েনের চেয়ে সামান্য বড়। দেহের নীচের অংশ উজ্জ্বল নানা বর্ণের মিশেল। ফলে অনেকেই ‘ট্যাটু টার্টল’ও বলে থাকেন। এগুলি প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত বাঁচে এবং দ্রুত আয়তনে বাড়ে। তাই অনেকেই বেশি দিন ঘরে রাখতে চান না। বাইরের জলাশয়ে ছেড়ে দেন। স্পেন, নেদারল্যান্ডস, চিন এবং অস্ট্রেলিয়ায় জলাভূমির জীববৈচিত্রে বহিরাগত এই কচ্ছপদের বিপদ বোঝা গিয়েছে ইতিমধ্যেই।’

অনির্বাণ জানান, রেড ইয়ারডরা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। ফলে খাদ্য এবং বাসস্থান নিয়ে স্থানীয় কচ্ছপ প্রজাতিগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তারাই জেতে। রবীন্দ্র সরোবরে ইন্ডিয়ান রুফ টার্টলের পাশাপাশি ইন্ডিয়ান টেন্ট টার্টল এবং ইন্ডিয়াল ফ্ল্যাপশেল টার্টলের বাস। ফলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না-হলে জাতীয় সরোবর থেকে ভারতীয় তিনটি প্রজাতির ঝাড়েবংশে লোপাট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরীসৃপ বিজ্ঞানী কৌশিকের কথায়, ‘এই কচ্ছপ যদি রাজ্যের নদী-নালা-জলাশয়েগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে তবে পরিণতি আরও মারাত্মক হতে পারে। 

আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন-এর বিশ্বের ১০০টি ‘অনিষ্টকারী বহিরাগত প্রজাতি’র তালিকায় রয়েছে রেড ইয়ারড স্লাইডার।’ তিনি জানান, এই রাক্ষুসে কচ্ছপগুলি দ্রুতহারে ছোট মাছ, পোকামাকড় এবং কাদা থেকে কেঁচো, শামুক ইত্যাদি খেতে থাকে। ফলে অনেক জৈব বর্জ্য পদার্থও সহজে মাটিতে মেশে না এবং জলাশয়ের সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। পাশাপাশি, এই কচ্ছপ সরীসৃপ প্রাণীদের প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া সালমোনেল্লার অন্যতম বাহক।

এর আগে ২০১৫ সালে রাজারহাটের জলাভূমিতে রেড ইয়ারড স্লাইডারের ছবি তুলেছিলেন বন্যপ্রাণপ্রেমী অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। কৌশিক এবং অনির্বাণের সঙ্গে তিনি ‘দ্য হার্পেটোলজিক্যাল বুলেটিন’-এ বিষয়টি নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। তাতে সম্ভাব্য বিপদের ইঙ্গিত দেওয়াও হয়েছিল। বন্যপ্রাণপ্রেমী সংগঠন ‘বায়োডাইভার্সিটি অফ রবীন্দ্র সরোবর’-এর কর্ণধার সুদীপ ঘোষ মঙ্গলবার বলেন, ‘জাতীয় সরোবরের পরিবেশ রক্ষার জন্য অবিলম্বে বহিরাগত কচ্ছপগুলি খুঁজে বার করে সরানো প্রয়োজন।’ 

এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার পরিবেশ বিভাগের মেয়র পারিষদ স্বপন সমদ্দার বলেন, ‘আমি এই শুনলাম।খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#রাক্ষুসে কচ্ছপ, #রবীন্দ্র সরোবর

আরো দেখুন