বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

বাংলার ক্রিকেটের প্রবাদপুরুষ সারদারঞ্জন রায়

January 16, 2020 | 2 min read

সারদারঞ্জন রায়চৌধুরী । প্রতিকৃতি: সব্যসাচী মিস্ত্রী

সাহেবদের একজন ডব্লিউ.জি.গ্রেস থাকলেও আমাদের বাঙালীও পেয়েছিল এক ক্রিকেটীয় ঠাকুর্দাকে। বাংলার ‘ডব্লিউ জি গ্রেস’ও বলা হত তাঁকে। তিনি সারদারঞ্জন রায়। কিশোরগঞ্জের মশুয়া গ্রামে খেললেন ক্রিকেট। সেটাই হয়ে গেল ইতিহাস। তিনিই বাংলায় ক্রিকেট খেলার জনক। 

তিনি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বড় ভাই। জন্ম কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর মশুয়া গ্রামে, বিখ্যাত রায় পরিবারে। এক হাতে বই, আরেকটায় ব্যাট – সারদারঞ্জন রায়ের পরিচিত ব্যক্তিরা এভাবেই তাঁর পরিচয় দিতেন। কবে যে কার কাছে ক্রিকেট শিখেছিলেন, তা আর কেউ বলতে পারে না। তবে বাংলায় ক্রিকেট খেলার প্রচলন তিনিই করেছিলেন।

সে সময় ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব ছিল সবচেয়ে প্রভাবশালী। সারদারঞ্জনরা ছিলেন পাঁচ ভাই –, উপেন্দ্রকিশোর, মুক্তিদারঞ্জন, কুলদারঞ্জন আর প্রমদারঞ্জন মিলে গড়েছিলেন ঢাকা কলেজ ক্রিকেট ক্লাব। পরে টাউন ক্লাবও গড়েন কলকাতায়। দু’দলেরই ক্যাপ্টেন সারদারঞ্জন। দু’দলই নিয়মিত সাহেবদের দলের বিরুদ্ধে খেলত। বাংলায় জেলাভিত্তিক ক্রিকেট দল গড়ে তাঁরা টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে থাকেন। ক্রিকেটের নিয়মকানুন নিয়ে প্রথম বাংলায় লেখা বই লেখেন এই সারদারঞ্জনই।

সারদারঞ্জন লিখেছেন, ‘ঢাকার কলেজের সাহেব প্রফেসরগণ এ বিষয়ে (ক্রিকেট) খুব উৎসাহী হইয়া ছেলেদের শিক্ষা দিতেন। এখনো বাঙ্গালী ছেলেদের মধ্যে যাঁহারা এ খেলার প্রশংসা লাভ করিয়াছেন, তাহাদের অধিকাংশ ঢাকার। ১১ বছর হইল পূর্ববঙ্গের ছেলেরাই প্রথম কলিকাতা শহরে প্রেসিডেন্সি কলেজে ক্লাব খুলিয়া খেলা আরম্ভ করেন।’

ক্রিকেট খেলছেন সারদারঞ্জন রায় । ছবি সৌজন্যেঃ প্রথম আলো

১৮৮৪ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ক্যালকাটা প্রেসিডেন্সি ক্লাবের সঙ্গে এক খেলায় ঢাকা কলেজ জয়লাভ করে। নেতৃত্বে ছিলেন সারদারঞ্জন রায়। ছাত্র হিসেবেও ছিলেন তুখোড়। বিএ পরীক্ষায় ঢাকা অঞ্চলে প্রথম।

আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। আলীগড়ের ছাত্রদেরও তিনি ক্রিকেটে হাতেখড়ি দেন। পরে অধ্যাপক হিসেবে ফেরেন নিজের ঢাকা কলেজে। পাশাপাশি চলতে থাকে ক্রিকেটও।

তখন প্রেসিডেন্সি কলেজের সঙ্গে খেলতে ঢাকা কলেজের একটি দল কলকাতা যায়। ছাত্র-শিক্ষক মেশানো সেই দলে ছিলেন তিন ভাই সারদা, কুলদা ও প্রমদা। প্রথম খেলায় প্রেসিডেন্সি হেরে গেলে এর ছাত্ররা দল থেকে শিক্ষকদের বাদ দেওয়ার দাবি তোলেন। সারদা এতে জোরালো আপত্তি করেন। কিন্তু কলেজের ব্রিটিশ অধ্যক্ষ বুথ ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাবের ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধে রাজি হয়ে যান। এ নিয়ে সারদারঞ্জনের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য হয়। ঢাকা কলেজ থেকে পদত্যাগ করে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অনুরোধে তিনি মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউটে যোগ দেন।

সেখানে অর্থসংকট থাকায় গোড়াতেই তাঁর বেতন অনিয়মিত হয়ে যায়। তখন এস রায় অ্যান্ড কোম্পানি নামে তিনি বই আর ক্রিকেট পণ্য বিক্রি শুরু করেন। কলকাতায় ১৮৯৫ সালে শুরু করেন বাংলার প্রথম ক্রিকেটসামগ্রীর দোকান। তখন বিলেতি ব্যাট ও বল পাওয়া যেত কেবল তাঁর দোকানেই। শিয়ালকোট থেকে আনা উইলো কাঠে শিক্ষার্থীদের জন্য সস্তায় ব্যাট বানানো শুরু হয় তাঁর যশোর রোডের কারখানায়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#সারদারঞ্জন রায়, #প্রবাদপুরুষ, #বাংলার ক্রিকেট

আরো দেখুন