বাঘের ছবি নিয়ে ভুয়ো ভিডিয়ো, তদন্তে পুলিশ
বাঘের আগে ‘ফেউ’দের দাপটে দিনভর আতঙ্ক ছড়াল ঝাড়গ্রামে। কেউ বা কারা সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে ‘বিনপুর এলাকায় বাঘে মানুষ খেয়েছে’ এমনই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তাদের বক্তব্যের সপক্ষে দেওয়া হয় ভুয়ো ছবি। সত্যি কি মানুষকে বাঘে খেয়েছে? তার জন্য একে অপরকে ফোন করে বিষয়টির সত্যতাও জানতে চেয়েছেন। এমনকী জেলার এক বন দপ্তরের কর্তাকে ফোন করে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন একজন। শুক্রবার দিনভর ঝাড়গ্রামের চায়ের দোকান থেকে স্কুল-কলেজে আলোচিত হয়েছে এই ভুয়ো ভিডিয়ো।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ এস হোলেইচ্চি বলেন, ‘ওই ছবি গুলো আমাদের রাজ্যের নয়। ছবিতে একটা চিতাবাঘও দেখা যাচ্ছে। কিছু মানুষ গুজব ও আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য এ সব ভাইরাল করেছে। পুলিশকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেছি।’ ঝাড়গ্রাম জেলার পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠোর বলেন, ‘কারা এই সব বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে আমরা তা তদন্ত করে দেখছি। সাইবার ক্রাইম অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘বাঘে মানুষ খাওয়ার’ গুজবের পিছনে রয়েছে ভাইরাল হওয়ায় ৬টি ছবি। তাতে দেখা যাচ্ছে, দিনের বেলায় একটি চিতাবাঘ রাস্তার পাশে বসে রয়েছে। পাশে অনেক গুলি মোটর সাইকেল। অন্য একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, খুবলে নেওয়া শরীরে অংশ। আর একটি ছবিতে ক্ষতবিক্ষত মানুষের দেহ।
গত রবিবার বিনপুরের লক্ষ্মণপুরের ধান জমিতে প্রথম দেখা গিয়েছিল বাঘের পায়ের ছাপ। তারপর দেখা যায় বেলপাহাড়ির সিন্ধুরিয়া জঙ্গলে। ওই জায়গাটি পরিদর্শনে যান রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিমাঞ্চল) শক্তিশঙ্কর দে। সুন্দরবন থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চার বনকর্মী, খাঁচা এবং ট্র্যাপ ক্যামেরা নিয়ে আসা হলেও এখনও পর্যন্ত বাঘের দেখা মেলেনি। বাঘ এ রাজ্যে আছে, না ঝাড়খণ্ডের দিকে চলে গিয়েছে, তাও নিশ্চিত নয়। তার মাঝেই এমন হাড়হিম করা ছবি দেখে অনেকেই আঁতকে উঠেছেন।
সিন্ধুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা পশুপতি মাহাতো বলেন, ‘আমাদের এখানে কোন মানুষকে বাঘে খায়নি। কিন্তু মোবাইলে কিছু ছবি ঘুরছে।’ ঝাড়গ্রামের ডিএফও বলেন, ‘আমার কাছেও ছবিগুলো এসেছে। ফোন করে ঘটনার সত্যতা জানতে চেয়েছেন অনেকে। এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যে। কে এগুলো করছে আমরা জানি না। কিন্তু মিথ্যে ঘটনা একবার ভাইরাল হয়ে গেলে মানুষকে সত্যি কথাটা বোঝানো খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে।’
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে কালচিনিতে একটি শুয়োরের খামারে দেওয়া কাঁটাতারে বেড়ায় চিতাবাঘের মৃত্যুর ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে বন দপ্তর। ওই খামারের মালিক সুরজ ওঁরাওকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয়। কাঁটাতারের ধারালো ব্লেডে গলার নলি কেটে চিতাবাঘের মৃত্যুর ঘটনা ময়না তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে মামলা রুজু করে জলদাপাড়া বনবিভাগ। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারি বন্যপ্রাণী সংরক্ষক দেবদর্শন রায় বলেন, ‘ভবিষ্যতে যাতে কেউ আর ওই ধরনের অপচেষ্টা না করেন সেই জন্য কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’