দিনের পুলকার চালক রাতে হয়ে যান ‘হসপিটাল ম্যান’
বয়স বছর পঞ্চাশ। সম্বল একটা সেকেন্ডহ্যান্ড মারুতি ইকো গাড়ি। তা নিয়েই মানুষের অসুবিধায় তাদের পাশে পুলকার চালক পার্থ করচৌধুরী। শহরের তিনটি হাসপাতালের রোগীর পরিজনদের বিনাপয়সায় খাবার বিলি করছেন কালীঘাটের মহামায়া লেনের মানুষটি। রোগীর আত্মীয়দের পরমবন্ধু এই ‘হসপিটাল ম্যান’।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী পার্থ । জোড়াতালি দিয়ে সংসার চালিয়েও মনের জোরঅসম্ভব। পুলকার চালিয়েও অনাত্মীয়দের খাওয়ানোর কাজটি করছেন। রাত দশটা হলেই রোগীর আত্মীয়দের চোখ চলে যায় এসএসকেএম হাসপাতালের বাইরে। সেখানে হাজির পার্থ বাবু। ৩৬৫ দিনই তাঁর দেখা মেলে। হাসিমুখে ভাত–ডাল–রুটি–তরকারি, বিস্কুট তাঁদের হাতে তুলে দেন। শুধু রোগীর পরিবারের কাছে নয়, হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকদের কাছেও তিনি ‘হসপিটাল ম্যান।’
পার্থবাবু বলেন, ‘টাকাকড়ি তো সঙ্গে নিয়ে যাব না। মানুষের ভালবাসায় আমি ধনী। আজীবন মানুষের সেবা করব। নাম চাই না। মানুষকে ভালবেসে কাজটা করি। দু’বছর আগে চিকিৎসার জন্য একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। নিজে দেখেছি রাত বাড়লেই হাসপাতালের সামনের খাবারের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যাটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। পেটে খিদে থাকলেও রোগীর আত্মীয়দের কিছু করার থাকে না।
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর ঠিক করি রাতে হাসপাতালের বাইরে থাকা রোগীর আত্মীয়দের মুখে খাবার তুলে দেব আমি। ব্যস, দেরি না করে কাজে লেগে পড়েছি। প্রথম দিকে খাবার জোগাড় করতে অসুবিধা হত। তারপর কালীঘাট এলাকার হোটেল, রেস্তোরাঁয় যোগাযোগ করি। হোটেল মালিকদের অনুরোধ করতাম বেঁচে যাওয়া খাবার তাঁরা যেন ফেলে না দেন। এখন সাতটি হোটেল থেকে খাবার পাই। এসএসকেএমের ডাক্তারির পড়ুয়ারাও সাহায্য করেছেন।’
এসএসকেএমের এমবিবিএসের ছাত্র শুভম লোধা জানান, ‘পার্থদা প্রতি রাতে ১৪০ থেকে ১৭০ জন রোগীর আত্মীয়দের বিনা পয়সায় খাওয়ান। কাজটা আমাদের খুবই ভাল লাগে। আমরাও তাঁর পাশে থাকি।’ একই কথা ডাক্তারির ছাত্র আকাশ পাঠক, বিবেক প্রসাদ, নেহার শোরেনদের।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের বাসিন্দা নুর ইসমাইল। তাঁর নাতি হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন, ‘রাতে হাসপাতালের বাইরে খাবার খাওয়ানোর জন্য একজন চিৎকার করছেন। বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছেন, দেখে প্রথমে অবাক হয়েছিলাম।’ সব সরকারি হাসপাতালে রোগীর পরিজনদের পাশে দাঁড়ানোই পার্থবাবুর আগামী স্বপ্ন।