সরস্বতী পুজোয় ডিমান্ড বিদ্যাসাগরেরও
বসন্ত পঞ্চমীতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে সরস্বতী পুজো হয়, এমনটাই আমরা সকলে জেনে এসেছি। বিদ্যালাভের জন্য দেবীর আরাধনা করা হয় ঘরে ঘরে। এবার নতুন এক কাণ্ড ঘটতে চলেছে বঙ্গভূমে। এ দেশে বিদ্যার প্রসার করেছেন বলে মনে মনে পূজিত হন যে মানুষটি, বিদ্যার দেবীর পুজোর সময়ে তাঁর মূর্তির পাশে রাখা হচ্ছে সেই মানুষের মূর্তি।
হ্যাঁ। বাগ্দেবী সরস্বতীর পাশে থাকবেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর! কলকাতা ও আশপাশে সরস্বতী পুজোর বেশ কয়েকটি মণ্ডপ এ বছর সাক্ষী থাকবে এমন ঘটনার। সরস্বতী পুজোর আগের সপ্তাহে কুমোরটুলিতে মূর্তির বায়নার ধরন সে কথাই বলছে।
কিন্তু সরস্বতী পুজোর মণ্ডপে বিদ্যাসাগর কেন?
কয়েকটি পুজো কমিটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত বছর লোকসভা ভোটের সময়ে অমিত শাহের মিছিলকে কেন্দ্র করে বাধা গোলমালের মধ্যে একদল দুষ্কৃতী বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে ওই মনীষীর মূর্তি ভেঙে ফেলে। ওই ঘটনাকে আম বাঙালির অনেকেই তাঁদের সংস্কৃতির উপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছেন। সেই জন্য ঘটনার আট মাস পরেও সেই ঘটনা বহু বাঙালি ভুলতে পারেননি।
মূর্তি ভাঙার পাল্টা হিসেবে তাই সরস্বতী পুজোর মণ্ডপে বিদ্যাসাগরের মূর্তি বসানোর উদ্যোগ। তা ছাড়া, এ বছর বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী। সেটাও ওই ভাবে বিদ্যাসাগরকে শ্রদ্ধা জানানোর কারণ।
এ বারের সরস্বতী পুজোয় কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের অনেকের কাছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তির যেমন দেদার বায়না এসেছে, তেমনই বীরসিংহের এই বীর সন্তানের জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে থিমও করেছে কয়েকটি পুজো কমিটি। সেই জন্য তাদের এক-এক জনের চাহিদা বিদ্যাসাগরের বিভিন্ন রকমের মূর্তি। সরস্বতীর মূর্তির পাশাপাশি।
কুমোরটুলিতে গড়া হচ্ছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি। এক-একটি মূর্তি এক-এক রকমের। কোনও মূর্তি বালক ঈশ্বরচন্দ্রের ল্যাম্পপোস্টের নীচে বসে পড়াশোনা করার, কোনওটায় আবার বাবা ঠাকুরদাসের হাত ধরে বালক ঈশ্বরচন্দ্র কলকাতায় আসছে। কার সাহেবের সামনে ডেস্কের উপর বিদ্যাসাগরের পা তুলে দেওয়ার মূর্তিও তৈরি হচ্ছে কুমোরটুলিতে।
শিল্পী সুনীল পাল জানালেন, গত ৫০ বছর ধরে তিনি কুমোরটুলিতে মূর্তি তৈরি করছেন, কিন্তু কখনও বিদ্যাসাগরের মূর্তি তৈরির বরাত পাননি। বরাত পেয়েছেন শিল্পী স্বপন পাল ও সুদর্শন পালও। দুই শিল্পীই বললেন, ‘বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পর থেকেই আমাদের কাছে ওঁর মূর্তি তৈরি করে দেওয়ার বরাত আসার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু সরস্বতী পুজোয় এমন চাহিদা এই প্রথম।’
শিল্পীরা আগামী ২৬শে জানুয়ারি রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেবে বিম্বিসার ও চন্দ্রগুপ্ত। ঠিকই পড়েছেন। তবে প্রাচীন ভারতের সম্রাট নন, কলকাতা মাউন্টেড পুলিশে অন্তর্ভুক্ত দু’টি ঘোড়ার নাম বিম্বিসার ও চন্দ্রগুপ্ত। কুচকাওয়াজে আগেও কলকাতা পুলিশের ঘোড়সওয়ার বাহিনী অংশ নিয়েছে। তবে বাহিনীর দুই নতুন সদস্য বিম্বিসার ও চন্দ্রগুপ্ত এ বারই প্রথম সামিল হচ্ছে।
কলকাতা মাউন্টেড পুলিশই দেশে ঘোড়সওয়ার বাহিনীর মধ্যে প্রাচীনতম। এখনও ময়দান এলাকায় টহলদারি এবং আইন-শৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয় এই বাহিনীকে। বাহিনীকে আরও কার্যকরী করা যায় কী ভাবে, তারও চিন্তাভাবনা করছেন লালবাজারের কর্তারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে কলকাতা মাউন্টেড পুলিশে ৬৮টি ঘোড়া রয়েছে। তার মধ্যে ১০টি নতুন। এক সময় ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হত বাছাই করা ঘোড়া। তবে এখন পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি-মুম্বই থেকেও উন্নত জাতের ঘোড়া আনা হয়। তার পর চলে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ। নতুন ১০টি ঘোড়ার মধ্যে চারটি প্রশিক্ষণ শেষে যোগ দিয়েছে বাহিনীতে। তার মধ্যেই রয়েছে বিম্বিসার-চন্দ্রগুপ্ত।
ব্রিটিশ জমানায় মাউন্টেড পুলিশকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ব্যবহার করা হত ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণেও। কুচকাওয়াজ বা পুলিশ স্পোর্টসেও ঘোড়সওয়ার বাহিনীর কসরত দেখতে পান সাধারণ দর্শক। তবে শহরে যানবাহন অনেক বেড়েছে। ফলে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে এখন আর ব্যবহার হয় না ঘোড়সওয়ার বাহিনী।
তবে ইডেনে ক্রিকেট বা ময়দানে ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নামানো হয়। পুলিশের এক কর্তা জানান, ঘোড়সওয়ার বাহিনীর সুবিধা হল একজন ঘোড়সওয়ার পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার সময় প্রায় ২০ জন পুলিশকর্মীর কাজ করতে পারেন। কারণ, ঘোড়সওয়ার বাহিনী থাকলে বিক্ষোভকারীরা ভয়ে দূরে সরে যান। তবে সব আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে এই বাহিনী ব্যবহার করা যায় না। তাতে কেউ ঘোড়ার ক্ষুরে জখম হতে পারেন।
দিল্লিতে বছর কয়েক আগে টহলদারির সময় গাড়ির ধাক্কায় পুলিশের একটি ঘোড়া ও এক পুলিশকর্মী মারা যান। তাই কোনও শহরেই এখন ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে এই বাহিনী ব্যবহার করা হয় না।
জানাচ্ছেন, শহরতলির বিভিন্ন ক্লাব থেকে মূর্তির বরাত বেশি আসছে।