বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

কিছু অজানা বাঙালী ক্রিকেটার

January 26, 2020 | 2 min read

মধ্যমণি সুঁটে বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি সৌজন্যে: espncricinfo

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটে বিজয়চন্দ্র সর্বাধিকারীর আগ্রহ ছিল। গায়ের রং কালো বলে সহপাঠীদের দেওয়া বেরী নামেই বেশি পরিচিত হন। নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী ছিলেন তাঁর দাদা। গ্র্যাজুয়েশনের পর কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের ক্রিকেট টিমে খেলতে থাকেন তিনি। স্পোর্টিং ইউনিয়ন আর কালীঘাট ক্লাবে দাপিয়ে খেলতেন। তাঁর জীবনের সর্বোচ্চ কৃতিত্ব ‘ইউনিভার্সিটি অকেশনাল’ নামে ক্রিকেট সংস্থা গঠন। ভারত তথা বাংলার সেরা ক্রিকেটাররা এই ক্লাবে খেলেছেন- সুঁটে বন্দ্যোপাধ্যায়, কার্তিক বসু প্রমুখ।

স্বাধীন ভারতে প্রথম বাঙালি টেস্ট ক্রিকেটার সুধাংশু শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি মন্টু নামে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। বাংলার কিংবদন্তি পেসারের জন্ম শতবর্ষ এই ২০১৯ সালেই। ১৯৪৮ সালে একটা মাত্র টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ওয়ালকট, উইকসদের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সেই একমাত্র টেস্টে দু’ইনিংস মিলিয়ে ঝুলিতে পাঁচ উইকেট। যার পুরস্কার, পরের টেস্টেই বাদ! অনেকের মতে ময়দানি রাজনীতির শিকার। 

গ্র্যান্ড হোটেলে দু’দেশের ক্রিকেটারদের ডিনার পার্টিতে জানা যায়, পরের মুম্বই টেস্ট থেকে বাদ মন্টু। মুম্বই টেস্টে অভিষেক হয় সুঁটে বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁরও আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শুরু ও শেষ ওই মুম্বই টেস্টেই। যাই হোক, গ্র্যান্ডের পার্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটাররা রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছিন, মন্টুর বাদ যাওয়ার খবরে। তাঁরা বলেছিলেন, ‘তুমি ইন্ডিয়ান, আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান। পরের টেস্টটা আমাদের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে খেলো।’

আর কখনো জাতীয় টিমে শিকে ছেঁড়েনি, কিন্তু পেয়েছিলেন জীবনের এক পরম বন্ধুকে। বিশ্ব ক্রিকেট যাঁকে চেনে ফ্র্যাঙ্ক ওরেল নামে। সেই ওরেলের আমন্ত্রণে সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার লিগে রয়টন ক্লাবের হয়ে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে ছ’মাস খেলে এসেছিলেন। এর সঙ্গে মিশে যায় এক দুঃখের গল্পও!

মন্টু নিজের মাকে কথা দেন, এক বারের বেশি আর বিদেশ যাবেন না। তাই যে দিন জাহাজে চেপে বাড়িতে ফেরেন, সে দিনই মন্টুর পাসপোর্ট জ্বলন্ত উনুনে ফেলে দেন তাঁর মা। অভিমানেই হোক বা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাতেই হোক, আর কখনো পাসপোর্টের জন্য আবেদনই করেননি মন্টু।

১৯৩৬ আর ১৯৪৬-এ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আগে আর পরে দুটো ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিলেন সুঁটে বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম সফরে নির্বাচিত হওয়ার সময় প্রতিদ্বন্দ্বী মিডিয়াম পেসার ত্রয়ী ছিলেন মহম্মদ নিসার, অমর সিংহ আর জাহাঙ্গির খান। এই রকম মারাত্মক পেস বোলার ত্রয়ী ভারতীয় ক্রিকেটে নাকি আর আসেনি। তবু সেই বঙ্গসন্তান এই বাংলা থেকে লড়েই দলে জায়গা করেছিলেন। 

পরের সফর ১৯৪৬, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীরা কেউ ছিলেন না। ওই সফরেই ওভালে শেষ উইকেটে চাঁদু সারওয়াতের সঙ্গে ২৪৯ রান যোগ করেছিলেন। বিপক্ষ ছিল সারে। সাড়া পড়ে গিয়েছিল সুঁটে-সারওয়াতের সেই জোড়া সেঞ্চুরিতে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আজও শেষ উইকেটে ওটাই দ্বিতীয় বৃহত্তম পার্টনারশিপ। সুঁটেকে তবু খেলানো হয়নি সেই সফরে। 

এরপর ১৯৪৯-এ আচমকাই টেস্ট ক্রিকেটের দরজা খুলে যায় সুঁটের কাছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একটাই টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন ব্রেবোর্নে। পাঁচ উইকেট নেন। শেষ ওভারে অপরাজিত অবস্থায় একটা ছক্কাও মেরেছিলেন। কিন্তু আর টেস্ট ম্যাচ পাননি। জীবনের প্রথম টেস্টে পাঁচ উইকেট নিয়েও আর ম্যাচে সুযোগ না পাওয়া, এমন হতভাগ্যের সন্ধান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।

উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি পার্কে এক রকম নিজে নিজেই খেলা শিখে কিংবদন্তি হয়েছিলেন আরেক বাঙালি ওপেনিং ব্যাটসম্যান। তিনি পঙ্কজলাল রায়। বিনা হেলমেটে চশমা চোখে বাইশ গজে দাঁড়াতেন তিনি। ১৯৫১ সালে ভারতের হয়ে দিল্লিতে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে অভিষেক। সেই ইনিংসে মাত্র ১২ রান করলেও ঐ সিরিজে তিনি দুটো সেঞ্চুরি করেছিলেন। 

পঞ্চাশের দশকেই ৪৩ টেস্টে ভারতের ইনিংস ওপেন করে ২৪৪২ রান, তাঁর টেস্টে প্রথম উইকেটে ৪১৩ রানের বিশ্বরেকর্ড (বিনু মাঁকড়ের সঙ্গে পার্টনারশিপে) অর্ধশতাব্দীরও বেশি অক্ষত ছিল। ভারতীয় ক্রিকেট আজ অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু কলকাতার এই বাঙালি ক্রিকেটাররা ডুবে গেছেন বিস্মৃতির অতলে!

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Unknown Bengali Cricketer, #Sports, #Shute Banerjee

আরো দেখুন