← কলকাতা বিভাগে ফিরে যান
ভিক্টোরিয়ার গম্বুজ – এক বিরাট সম্পদ
কলকাতার ল্যান্ডমার্ক বলতে অনেকেই বলবেন ‘ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল’। বিদেশীদের কাছেও হাওড়া ব্রিজের থেকে কলকাতা বেশী পরিচিত ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে। এই দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে মনুমেন্ট।
১৯০১-এ রানির মৃত্যুর পর মূলত কার্জনের উদ্যোগেই শুরু হয়েছিল এই স্মৃতিসৌধ তৈরী। ভিক্টোরিয়া স্মৃতিসৌধের সবথেকে আকর্ষণীয় অংশ হল এর ঠিক মাঝের একটি গম্বুজ। এই ডোমটির ঠিক নীচের ঘরটিই ‘কুইন’স হল’। আর ডোমটির ওপরেই মাঝখানে বসানো আছে বিউগল হাতে ডানা মেলা ব্রোঞ্জের সেই বিশ্বখ্যাত পরীটি।
নীচের ঘরটির পাশ দিয়ে ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে চলে যাওয়া যায় ওপরে। ডোমটির চারপাশ ঘিরে রয়েছে একটি রেলিং দেওয়া রাস্তা। এই রাস্তার ঠিক ওপরের পোর্টিকো’গুলিতে আছে ১২টি বেশ বড় ক্যানভাসের ওপর আঁকা তৈলচিত্র।
এই ছবিগুলি কি এবং কোন উপলক্ষে আঁকা সেটা দেখা যাকঃ-
- অর্ধচন্দ্রাকৃতি এই ছবিগুলির মধ্যে প্রথমেই দেখা যাবে রাজা চতুর্থ উইলিয়ামের মৃত্যু সংবাদ রানিকে জানাচ্ছেন ক্যান্টারবেরির প্রধান ধর্মযাজক লর্ড চেম্বারলেন (২০ জুন, ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ)।
- দ্বিতীয় ছবিতে চিত্রায়িত হয়েছে প্রিভি কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে রানির সাক্ষাৎ এবং লর্ড চ্যান্সেলর কর্তৃক রানিকে শপথ গ্রহণ করাবার দৃশ্য।
- ওয়েস্টমিন্সটার অ্যাবেতে ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন রানির অভিষেক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভীষণ জাঁকজমকের সঙ্গে। সেই রাজকীয় ধূমধামের দৃশ্য চিত্রায়িত হয়েছে তৃতীয় চিত্রে।
- পার্লামেন্টের অধিবেশনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান (১৭ জুলাই ১৮৩৭) শিল্পী চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন চতুর্থ ছবিতে।
- রাজকীয় শকটে রানি প্রথম লন্ডনে আসেন ৯ নভেম্বর, ১৮৩৭-এ। রানির সেই বর্ণাঢ্য আগমনী শোভাযাত্রার দৃশ্য রয়েছে পঞ্চম চিত্রে।
- ষষ্ঠ চিত্রটিতে এক পাশে ব্রিটিশ সিংহ এবং অন্য পাশে বাংলার বাঘ-সহ ভারতীয় সিপাহী পরিবেষ্টিত ব্রিটানিয়া’কে দেখা যাচ্ছে।
- রাজকুমার অ্যালবার্টের সঙ্গে রানি ভিক্টোরিয়ার বিয়ের দৃশ্যটি শিল্পী চমৎকার তুলে ধরেছেন সপ্তম চিত্রে।
- ১৮৭৭-এ রানি ভিক্টোরিয়াকে ‘কাইজার-ই-হিন্দ্’ বা ‘ভারত সম্রাজ্ঞী’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। সে দিন এই সম্মান প্রদর্শন উপলক্ষে বিরাট একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল দিল্লীতে। অষ্টম ছবিতে ধরা পড়েছে রাজকীয় অনুষ্ঠানের সেই দৃশ্য।
- রাজাসনে উপবিষ্ট ভিক্টোরিয়ার একটি প্রতীকী আলেখ্য: শিরে রাজমুকুট, হাতে রাজদণ্ড আর অঙ্গে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় পরিচ্ছদ নবম চিত্রের প্রতিপাদ্য বিষয়। এখানে ভিক্টোরিয়ার সঙ্গী ‘বিশ্বস্ততা’ ও ‘স্বাধীনতা’ এবং কাঁধে রয়েছে ‘সত্য’ ও হাতে ‘ন্যায়’-এর প্রতীক বিরাজমান।
- রানির রাজ্য শাসনের হীরকজয়ন্তী বেশ ধুমধাম করেই পালিত হয়েছিল ২২ জুন ১৮৯৭-তে, সেন্ট পলসে। একাদশ চিত্রে সেই উৎসবপালনের দৃশ্য দেখানো হয়েছে।
- দ্বাদশ এবং শেষ ছবিতে ধরা পড়েছে শোকের আবহ। এখানে দেখানো হয়েছে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ শয্যায় শায়িত মহারানি ভিক্টোরিয়া, ২২ জানুয়ারি ১৯০১ খ্রিস্টাব্দ।
- এককথায়, এই চিত্রমালাই এই সংগ্রহালয়ের এক বিরাট সম্পদ।