ইসরোর হয়ে মহাকাশে যাবে এই ‘মহিলা রোবট’
ঠিক যেন ব্লেজ়ার গায়ে দেওয়া কর্পোরেট চাকুরে! নাম ‘ব্যোম মিত্র’। ‘মিস মিত্র’ যন্ত্রমানবী। ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি। ২০২২-এর ভারতের মহাকাশ অভিযানে চার মানব-নভশ্চরের সঙ্গে তাকেও পাঠাবে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)।
বুধবার সংবাদমাধ্যমের মাইক্রোফোনের সামনে ঝরঝরে ইংরেজিতে সে জানাল, অস্ত্রোপচার করতে পারে, আবার সুইচ প্যানেলও সারাতে পারে। টুকটাক কাজের ফাঁকে কোন সঙ্গীর কী নাম, তা-ও একবার দেখেই বলতে পারবে। আবার সঙ্গীরা কোনও প্রশ্ন করলে উত্তর দিতেও পারদর্শী সে।
ইসরো সূত্রের খবর, ‘ব্যোমমিত্র’ মহাকাশযানে ছোটখাটো পরীক্ষা করবে এবং পৃথিবীতে ইসরোর কমান্ড সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কাজ করবে। এই যন্ত্রমানবী অবশ্য অনড়। তার পা তৈরি করা হয়নি। চেয়ারে বসে সামনে বা পাশে ঝুঁকে যাবতীয় কাজ করবে সে। কৃত্রিম মেধায় সে যাবতীয় কাজ করবে, সঙ্গীদের চিনতে পারবে, সাহায্য করবে কথোপকথনে। ভারতীয় মেয়েরাও যে মহাকাশ অভিযান বা গবেষণায় পিছিয়ে নেই, তা বোঝাতে যন্ত্রমানবী তৈরি করা হয়েছে।
এবছরের শেষের দিকেই গগনযান মিশনের পরীক্ষামূলক অভিযানে ব্যোমমিত্রকে মহাকাশে পাঠানোর বন্দোবস্ত করছে ইসরো। উল্লেখ্য, প্রতিশ্রুতি মতোই মিশন গগনযানের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ইসরো। চারজন মহাকাশচারীকে এই মিশনের জন্য বাছাই করা হয়েছে। এই মহাকাশচারীদের রাশিয়াতে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে।
সেখানেই ১১ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথম মানব অন্তঃরীক্ষ অভিযানের জন্য তৈরি হবেন নভোশ্চররা। আনুমানিক ১০ হাজার কোটি টাকা খরচে এই মহাজাগতিক প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে ২০২২ সালে। ওই বছর ভারতের স্বাধীনতার প্লাটিনাম জয়ন্তী। ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসে ভারতবাসীকে সেরা উপহার হবে এই গগনযান মিশন। সেই লক্ষ্যেই জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ইসরো।
মহাকাশে রোবট পাঠানো অবশ্য নতুন নয়। চাঁদে বা মঙ্গলের মাটিতে যে সব ‘রোভার’ বা গাড়ি পাঠানো হয়, সেগুলিও এক-একটি রোবট। মানুষের চেহারার রোবটও এই প্রথম যাচ্ছে না। নাসার রোবট-নভশ্চর বা রোবোনট ২০১৫ সালে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে। গত বছর রাশিয়াও যন্ত্র-নভশ্চরকে মহাকাশে পাঠিয়েছে। এদের কাজ, মূলত নভশ্চরদের সাহায্য করা এবং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত মেরামতি।
এর বাইরে কখনও মাকড়সা, কখনও গাড়ির আকারে একাধিক রোবট পাঠিয়েছে নাসা। ২০১৩ সালে কিউরিয়োসিটি নামে মঙ্গলগ্রহে পাঠানো গাড়িটিও রোবট ছিল। চন্দ্রযান-২ অভিযানে ভারতের বিক্রম-ও ছিল রোবট। কারণ, বছরের পর বছর কোনও মানুষ তো মহাকাশে থাকতে পারে না! সে ক্ষেত্রে রোবট অনেক বেশি কার্যকর। ভারতের যন্ত্রমানবী অবশ্য সঙ্গী নভশ্চরদের সঙ্গেই ফিরবে পৃথিবীতে।