নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগায় বসন্ত পঞ্চমীর পরম্পরা
দেশের নানা জায়গায় আজ পালিত হচ্ছে বসন্ত পঞ্চমী। বাংলায় আজ ঘরে ঘরে হচ্ছে সরস্বতী পুজো। আপনারা কি জানেন এই দিনটার সাথে দিল্লির নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগা ওতপ্রোতভাবে জড়িত? নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগায় এক বিশেষ উৎসব হিসেবে পালন করা হয় বসন্ত পঞ্চমী। বেশ মজার ব্যাপার, তাই না?
নিজামুদ্দিন বলতেন, ইশ্ক (প্রেম), অকল (বুদ্ধি), আর ইল্ম (জ্ঞান) এই তিনটের মিশ্রণই সুফী হবার মূল কথা। আর এর মধ্যে প্রথমটার মাত্রা অনেকটা বেশি ছিল বলেই তাঁর নাম, “মেহবুব এ ইলাহী” (প্রেমের ঈশ্বর)! তাঁর বোনের ছেলে তাকীউদ্দীন নূহ কে তিনি বিশেষ স্নেহ করতেন। দুর্ভাগ্যক্রমে এই তাকীউদ্দীন কয়েকদিনের অসুখে হঠাৎ মারা যান এবং নিজামুদ্দিন এতে খুবই ব্যথিত হন। দীর্ঘদিন তাঁর মুখে হাসি ফোটে না। তিনি তাঁর চিল্লায় (ধ্যান করার জায়গা) বসে থাকতেন এবং তাঁর শিষ্যরা বিশেষত খুসরো তাঁকে নিয়ে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন।
এমন সময় এক দিন খুসরো দেখেন মহিলারা হলুদ শাড়ি পরে, হলুদ ফুল নিয়ে গান গাইতে গাইতে, হাসতে হাসতে কোথাও যাচ্ছে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে বসন্ত এসে গেছে, শীত শেষ। তাই তারা নিজেদের আরাধ্য দেবতাকে পুজো দিতে যাচ্ছে। খুসরো জিজ্ঞাসা করেন, এই বেশ ভূষা ও ফুল দেখলে কি তাদের দেবতা খুশি হবেন? তারা হ্যাঁ বলাতে, খুসরো তাড়াতাড়ি হলুদ শাড়ি পরে আর হলুদ সর্ষের ফুল নিয়ে নিজামুদ্দিনের কাছে গান গাইতে গাইতে পৌঁছান
“সকল বন্ ফুল রহি সরসো/ অম্বুয়া বোরে, তেসু ফুলে / কোয়েল কুকে দর দর/ অউর গোরি করত শৃঙ্গার ”
নিজামুদ্দিন নিজের প্রিয় শিষ্যর এই বেশ ভূষা আর চেষ্টাতে হেসে ফেলেন। সেই থেকে বসন্ত বিশেষ দিন নিজামুদ্দিন এর খানকা এবং দরগাতে।
উনি মারা যাবার পর ৭০০ বছর পেরিয়ে গেছে। আর আজও চলছে সেই পরম্পরা।