সরস্বতী পুজোতেও বাঙাল ঘটির দ্বন্দ্ব
মাঘ মাস মানেই বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা। শুক্লপক্ষের পঞ্চমীতে সাড়ম্বরে বাগদেবীর আরাধনার পাশাপাশি সারা বাংলা উৎসবের আমেজে মেতে থাকে।
কচিকাচারা তো বটেই, সদ্য কৈশোর পেরোনো কলেজ পড়ুয়া কিংবা নিত্য অফিসের ঘানি টানা সাধারণ চাকুরেও ব্রাত্য নয় এই উৎসবে। শীত পেরিয়ে বসন্তের আগমনী মনকে করে তোলে চনমনে। বাতাসে প্রেম প্রেম ভাব। আর সবার ওপরে সুস্বাদু খাবারের হাতছানি।
আমার জন্ম এক বাঙাল পরিবারে। ছোট থেকে একরকম সরস্বতী পুজো দেখে অভ্যস্ত। তাই যখন কলকাতায় বারো বছর আগে এলাম, প্রথম সরস্বতী পুজোয় তাজ্জব বোনে গেছিলাম। চিংড়ি-ইলিশ, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের মতোই মা সরস্বতীর আপ্যায়নের ক্ষেত্রেও ঘটি-বাঙ্গালের এক হওয়া, নৈব নৈব চ।
অন্যান্য আচার অনুষ্ঠানের মতোই সরস্বতী পুজোও ঘটিদের জন্য strictly নিরামিষ। আর বাঙালদের পুজো জোড়া ইলিশ ছাড়া হতেই পারে না। ঘটিরা যেখানে খিচুড়ি আর লাবড়ার ভোগেই সন্তুষ্ট, বাঙালি বাড়িতে বাঁধাকপির ঘন্ট আর ইলিশ না খেলে খিচুড়ি হজম হবে না। ঘটিবাড়িতে দেখেছি সরস্বতী পুজোর পরেরদিন ষষ্ঠী পুজো হয়, গোটাষষ্ঠী করে চলে অরন্ধন।
সরস্বতী পুজোর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে কুল। সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলে পরীক্ষায় ফেল করার জূজূ এখনও বড়রা ছোটদের দেখিয়ে থাকেন। প্রসাদে নারকেল কুল, দুপুরে টোপাকুলের চাটনি কিংবা বন্ধুদের সাথে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে বনকুল খাওয়ার মজা প্রত্যেক বাঙালির উপভোগ করা হয়েছে জীবনে একবার।
শুরুতেই বলেছিলাম না, সরস্বতী পুজোর দিনটা প্রেম দিবস ঘোষণা করলে হয়ত কিছু ভুল হবে না। Valentine’s Day এর যুগেও বাঙালির সরস্বতী পুজো এখনও যুগ যুগ জিও। বন্ধুদের সাথে স্কুলে স্কুলে ঘোরা থেকে বাসন্তী রঙের শাড়ি পরিহিতা বঙ্গললনাদের ওপর ঝাড়ি মারা – এসবই বাঙালির মজ্জায় মজ্জায়।
সরস্বতী পুজোর হাত ধরেই আমাদের সবার জীবনে বসন্তের ছোঁয়া লেগে যায়।