সরস্বতী পুজো এবং কুলের নস্টালজিয়া
বাজারে গেলেই এখন নানা রকম কুল দেখতে পাবেন। টক-মিষ্টি গোল টোপা কুল, নারকেল কুল, আপেল কুল, এমনকি স্বাদ মেটাতে আছে বাও কুল। কিন্তু দেশি নারকেল কুলও আর মেলে না সে ভাবে। খুঁজে পেতে যা-ও বা মেলে তার আর সে জাত নেই, দামও হাইব্রিডের কুলের দ্বিগুণ। হাইব্রিড ‘বাও’ কুল যেখানে কুড়ি থেকে চল্লিশ টাকা কিলো, একটু ভাল দেশি টোপা কুল সেখানে আশি টাকা, আর দেশি নারকেল কুল দেড়শো টাকা।
আমাদের ছোটবেলায় সরস্বতী পুজো ছিল কুল খাওয়ার ছাড়পত্র। তার আগে নুন ঠেকিয়ে টোপা কুল মুখে তুললেই পরীক্ষায় নির্ঘাৎ ফেল! সেই কুলও নেই, সেই ছেলেমানুষি বিশ্বাসও অনেকটাই গায়েব। সরস্বতী পুজোর অনেক আগে থেকেই বাজারে বিক্রি হয় হাইব্রিড কুল। স্কুলগেটের বাইরে বাও কুল লাল-হলুদ সস আর কাসুন্দি মাখিয়ে বিকোয় দেদার। ছোটরা ভুলেই গিয়েছে চুরি করে ঢিল ছুড়ে দেশি কুল পেরে, শিলনোড়ায় থেঁতো করে নুন-লঙ্কা মাখিয়ে খাওয়া।
আর দোয়াত তো হারিয়ে গিয়েছে দাদু-ঠাকুমার সঙ্গেই। এখন সব ‘ইউজ় অ্যান্ড থ্রো’। পুজো শেষ হতেই ফুল- বেলপাতার সঙ্গে জলাঞ্জলি হয়ে যায় মাটির দোয়াত। পরের বছর আবার নতুন করে কিনে নিলেই হল, কে-ই বা যত্ন করে তুলে রাখবে?
তাই সরস্বতী পুজোর মুখে এখন মাটির আর প্লাস্টিকের দোয়াতের ছড়াছড়ি। কোথায় হারিয়ে গিয়েছে ঝর্না কলমের কালির চিনামাটির আর কাচের দোয়াত! প্রতি বছর পুজোর সময়ে একটা টিনের বাক্স থেকে সেই সব দোয়াত বের করে ধুয়ে পুজোয় দিতেন ঠাকুমা। পুজোর সময়ে পুরুত ঠাকুরের কোলে বসে স্লেট পেন্সিলে অ-আ লিখে হাতেখড়ি। আর মাঝে-মধ্যে টুক করে দেখে নেওয়া পাশেই পেতলের থালায় সাজানো কুল। কখন যে পুজো শেষ হবে!
ছোটবেলায় প্রতিবেশীর বাগানে কুল চুরি কে না করেছে। স্কুল থেকে ফেরার পথে ঢিল ছুড়ে কুল পাড়া। ছুটির দিনে দাপাদাপি। মাঝে-মাঝে বিরক্ত হয়ে লাঠি হাতে ছুটে আসতেন পাশের বাড়ির কাকা। যে যে-দিকে পারত ছুট লাগাত। কাকু ফিরে গেলেই যে কে সেই। আজকাল সেই গাছও নেই, বাচ্চাদের সময়ও নেই।
কুল, সরস্বতী পুজো – এখন সবই নস্টালজিয়ার অঙ্গ।