বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

জানেন কি? ১৯৪৮ এর আগে পাঁচবার খুন করার চেষ্টা হয়েছিল গান্ধীজিকে

January 30, 2020 | 2 min read

মহাত্মা গান্ধীর হত্যার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী মনু গান্ধী (যাকে আমরা মনুবেন নামে চিনি) ভুলতে পারেননি ১৯৪৮ সালের ৩০ শে জানুয়ারির সেই ঘটনা।

দুজন কাঠিয়াওয়ারের দুই নেতা গান্ধীজির সাথে সেদিন দেখা করতে চাইলে গান্ধীজি মনুবেনকে বলেন, “ওদের বলে দাও আমি বেঁচে থাকলে, এই প্রার্থনার শেষে পদযাত্রায় ওরা আমার সাথে কথা বলতে পারে।”

বিড়লা হাউসের পেছনের মাঠে সর্ব ধর্ম সমন্বয় প্রার্থনা সভায় তিনি প্রায় ১০ মিনিট দেরিতে পৌঁছন সেদিন। গান্ধীজি তাঁর ডানদিকে মনুবেন এবং বাম দিকে আভা চট্টোপাধ্যায়কে (গান্ধীর পালিতা কন্যা) ধরে হাটছিলেন। সেই সময় খাকি পোশাক পরা এক বলিষ্ঠ ব্যক্তি দলবল নিয়ে গান্ধীকে প্রণাম করতে আসে। প্রণাম করার অছিলায় পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে পর পর তিনটি গুলি করে গান্ধীজিকে।

লোকটি ছিল নাথুরাম গডসে। সময়, ১৯৪৮ সালের ৩০ শে জানুয়ারি বিকেল ৫ টা ১৭।

এই খুনের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্ত জানেন কি এর আগেও বাপু নিশিত মৃত্যুর হাত থেকে ৫ বার ফিরে এসেছেন?

২০১৫ সালে প্রকাশিত তিস্তা সেতালবাদের লেখা ‘বিয়ন্ড ডাউট- আ ডসিয়ার অন গান্ধী’স অ্যাসাসিনেশন’ বইটিতে গান্ধীহত্যার এই ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে।

১৯৩৪ সালের ২৫ শে জুন গান্ধীজির পুনে কর্পোরেশন অডিটোরিয়ামে বক্তব্য রাখার কথা ছিল। তাঁর স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধীর সাথে তিনি গাড়ীতে যাচ্ছিলেন। সেখানে তাঁর গাড়ির মতো আরও দুটো গাড়ি যাচ্ছিল। সৌভাগ্যক্রমে যে গাড়িটিতে গান্ধী দম্পতি যাছিলেন তা এক রেলের ক্রসিং-এ আটকে যায়।

গান্ধীজির গাড়ির মতোই দেখতে প্রথম গাড়িটিকে বোম দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। কর্পোরেশনের মুখ্য সচীব, দুজন পুলিশ সহ আরও সাত জন ভয়ংকর ভাবে আহত হয়। গান্ধীজির সেক্রেটারি পেয়ারেলাল তাঁর বই, ‘মহাত্মা গান্ধী-দ্য লাস্ট ফেজ’ এ বলেছেন এই ঘটনার পেছনে ছিল হিন্দু উগ্রবাদীরা।

প্রায় ১০ বছর পরে ১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে বাপুকে যখন আগা প্যালেসের নজরবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পান, তাঁর ম্যালেরিয়া ধরা পড়ে। কিছুটা সময় বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে পুনের কাছে পঞ্চগানির এক শৈল আবাসে যান। ১৮-২০ জন লোক বাস ভাড়া করে সেই আবাসে যায় এবং দিনভর গান্ধী বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। বাপু তাদের মধ্যে একজন প্রতিনিধিকে ডেকে আলোচনায় বসতে চান। কিন্তু সে তা অস্বীকার করে। প্রতিনিধির নাম নাথুরাম গডসে।

নাথুরাম গডসে গান্ধীকে বন্দি করা সত্বেও গান্ধী তাকে তাঁর সাথে ৮ দিন কাটানোর আহ্বান জানান, তার দৃষ্টিকোণ বোঝার জন্যে। তাও নাথুরাম অস্বীকার করলে বাপু তাঁকে যেতে দেন।

তৃতীয় খুনের চেষ্টাটি হয় ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বরে কানপুর কমিশনের ঠিক আগে। গান্ধীর সাথে মহম্মদ আলী জিন্নার আলোচনায় হিন্দু মহাসভা নাশকতার পরিকল্পনা করে।

চতুর্থ ঘটনাটি ঘটে ১৯৪৬ সালের জুন মাসে যখন গান্ধী স্পেলার নামে পুনে গামী এক ট্রেন লাইন চ্যূত হয়। চালকের পারদর্শিতায় ক্ষতি এড়ানো অনেকাংশেই সম্ভব হয়। শুধুমাত্র ইঞ্জিনের ক্ষতি হয়। লাইন চ্যূত হয়ে একটি বড় পাথরে ট্রেনটি ধাক্কা খায়। ভাগ্যক্রমে চালক ট্রেনের গতি কমিয়ে যাত্রীদের প্রান রক্ষা করে।

১৯৪৮ সালের ২০ শে জানুয়ারির চক্রান্তের কথা অনেকেরই জানা। সেতালবাদের বইয়ের তথ্য অনুযায়ী কিছু যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে গান্ধীজির বক্তৃতা দিতে খানিক দেরী হয়ে যায়। সেদিন মদনলাল পওয়া, নাথুরাম গডসে, নারায়ণ আপ্তে, বিষ্ণু কারকারে, দিগম্বর বাগরে, গোপাল গডসে এবং শঙ্কর কিস্তাইয়া সেই মিটিং-এ উপস্থিত ছিল তাদের ষড়যন্ত্রকে পরিণতি দেওয়ার জন্যে। তাদের পরিকল্পনা ছিল যে তারা মঞ্চে বোমা ছুড়বে। সবাই পালাতে গেলে বাগড়ে এবং কিস্তিয়া বাপুকে গুলি করবে।

নাথুরাম গডসে এবং নারায়ণ আপ্তে সেদিন তাদের বাড়ি পালিয়ে যায়। ২৯ শে জানুয়ারি দিল্লী ফিরে আসে ১১ টি বুলেট নিয়ে। বাকিটা ইতিহাস।

তথ্যসূত্র: দি বেটার ইন্ডিয়া

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Gandhi, #mahatmagandhi, #gandhiji, #fatherofthenation, #bapu, #freedom, #peace

আরো দেখুন