বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

দণ্ড মহোৎসব – এক সম্ভ্রান্ত ঐতিহ্য

January 31, 2020 | < 1 min read

দণ্ড মহোৎসব এর ভোগ

চৈতন্যদেব নিত্যানন্দকে বাংলায় ফিরে হরিনাম প্রচারের আদেশ দিলেন। নিত্যানন্দ এসে আশ্রয় নিলেন খড়দহে। পানিহাটিতে তখন রাঘব পন্ডিতের বাস। রাঘব পন্ডিতের ভিটেয় এসেছেন চৈতন্য-নিত্যানন্দ।

এবার নিত্যানন্দের শরণে এলো জমিদার গোবর্ধন দাসের একমাত্র সন্তান রঘুনাথ দাস। অল্প বয়সেই চৈতন্যের সান্নিধ্যে এসে বৈষ্ণব ভক্ত হয়ে ওঠে। গঙ্গার ধারে এক বটগাছের নীচে বসে ছিলেন নিত্যানন্দ। সেখানেই সাক্ষাৎ হয় রঘুনাথের সাথে। নিত্যানন্দ রঘুনাথকে দেখামাত্র বলেছিলেন – ‘আয়, তোকে আজ দণ্ড দিব।’ নিত্যানন্দ আদেশ দিলেন, উপস্থিত সব বৈষ্ণব ভক্তদের দই-চিঁড়ে ভোজন করাতে।  

বড় বড় মৃৎকুণ্ডের মধ্যে পাঁচ-সাতজন ব্রাহ্মণ চিঁড়ে ভেজাতে লাগলেন। একজন ভক্ত শ্রীনিত্যানন্দ ও শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর জন্য চিঁড়ে ভেজাতে লাগলেন। অর্ধেক চিঁড়ে দই কলা দিয়ে, আর অর্ধেক ঘন দুধ, চিনি, চাঁপাকলা দিয়ে মাখা হল।

কথিত আছে নিত্যানন্দ নাকি ধ্যানের মাধ্যমে চৈতন্যকে ডাক পাঠিয়েছিলেন। আর চৈতন্য হাজির হন সেই দই-চিঁড়ের উৎসবে। এই নিয়ে কৃষ্ণদাস কবিরাজ তাঁর চৈতন্যচরিতামৃতে লিখেছেন – ‘মহাপ্রভু আইল দেখি নিতাই উঠিলা। তাঁরে লঞা সবার চিড়া দেখিতে লাগিলা।।’

সেই থেকে পানিহাটিতে শুরু হয় দই-চিঁড়ে উৎসব বা দণ্ড মহোৎসব। প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লা-ত্রয়োদশী তিথিতে সেই বটগাছের নিচে পালিত হয় দণ্ড মহোৎসব। হাজার হাজার বৈষ্ণব ভক্ত এই উৎসবে যোগদান করে।

সম্প্রতি ভারতের শাসক দলের এক নেতা মন্তব্য করেছেন, কয়েকজন রাজমিস্ত্রিকে চিঁড়ে খেতে দেখেই তিনি বুঝে গেছেন, তারা নাকি ‘বাংলাদেশি’ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। তাঁর ইঙ্গিত ছিল একটি নির্দিষ্ট ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি। দই-চিড়ের এতো সম্ভ্রান্ত ইতিহাস থাকা স্বত্বেও এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য সত্যিই বিস্ময়কর। 

এবার কি চৈতন্য-নিত্যানন্দকেও বিদেশী আখ্যা দেওয়া হবে?

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Nityanda Maha Prabhu, #West Bengal, #Danda Mahotsav

আরো দেখুন