হলুদ ট্যাক্সির মতো যাত্রী প্রত্যাখ্যান অভ্যাস করছে অ্যাপ ক্যাবও
কলকাতায় যে রোগ হলুদ ট্যাক্সি একচেটিয়া করে ফেলেছিল, তা এখন সংক্রামিত অ্যাপ-ক্যাবেও। রিফিউজাল। হলুদ ট্যাক্সিতে যেমন মুখের উপরে চালক সপাটে ‘না’ বলে দেন, অ্যাপ-ক্যাবে প্রত্যাখ্যান তুলনায় ‘নরম’। মোট কথা, শহরের পরিবহণে যা একসময়ে নয়া দিশা দেখিয়েছিল, তা-ই ক্রমশ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ক্যাব-রিফিউজালে ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, ওলা হোক বা উবের, বুক করলেই চালক ফোনে গন্তব্য জানতে চাইছেন। কারও প্রশ্ন ভাড়া নগদে মেটানো হবে না অনলাইনে। অনেক চালক যাত্রীকে ফোন না-করে চ্যাটে এ সব প্রশ্নের উত্তর চাইছেন। জবাব মনমতো না-হলেই বাতিল হচ্ছে বুকিং। নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা। বিস্তর অভিযোগও জমা হচ্ছে।
রয়েছে অন্য ফিকিরও। অনেক চালর চ্যাট করে যাত্রীর থেকে গন্তব্য জানতে চান। অথচ যাত্রী ফোন করলে ধরেন না। এই রিফিউজালের ঠেলায় বুকিং বাতিল করতে গিয়ে অনেক সময়ে যাত্রীকেও জরিমানা দিতে হচ্ছে। নিয়ম হল, বুকিংয়ের পাঁচ মিনিটের মধ্যে ট্রিপ বাতিল হলে জরিমানা দিতে হয় না।
উবের, ওলা-র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চালকের জন্য বুকিং বাতিল হল, অথচ যাত্রীকে জরিমানা দিতে হল, এমন অভিযোগ এলে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নজির রয়েছে। অ্যাপে এ জন্য অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। চালকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রেটিং কমানো তো বটেই, বেশি রিফিউজাল হলে চালককেই বাতিল করে দেওয়া হয়। ওলা অ্যাপের পাশাপাশি তাদের ফেসবুক পেজেও অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রেখেছে। কিন্তু ক’জন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে খতিয়ান কোনও সংস্থাই দেয়নি।
প্রযুক্তিগত ভাবে চালকরা যে কৌশল নিচ্ছেন, তাতে ফাঁসছেন যাত্রীরা। মোবাইলে বুকিং ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা বন্ধ করে দিচ্ছেন ইন্টারনেট। তার পরে রাইড ‘অ্যাকসেপ্ট’ করেন চালকরা। অ্যাপে সেটি করা যায়। এতেই চালকরা যাত্রীর ফোন নম্বর দেখতে পান। তার পরে ফোন বা চ্যাট করে গন্তব্য জেনে নেওয়া। পছন্দ না-হলে ট্রিপ বাতিল। এর পরে চালক তাঁর ফোনের ডেটা মুছে আবার ইন্টারনেট চালু করে লগ-ইন করেন। ফলে, চালকই যে বুকিং বাতিল করেছেন, তা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যায়।
পশ্চিমবঙ্গ ওলা, উবের অনলাইন ক্যাব অপারেটার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় রিফিউজালের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বিষয়টি নিয়ে চালকদের সঙ্গে কথাও হয়েছে বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, ‘অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলির ভাড়ার কাঠামোও দায়ী। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আনা হয়েছে। তিনি পরিবহণ সচিবকে সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন।’