বহুরূপী – বিস্মৃতির পথে বাংলার লোকশিল্প
“বাবু আমি ছিনাথ। ছিনাথ বহুরূপী।”
না শরৎচন্দ্রের শ্রীনাথরা আর বহুরূপী নয়। পেটের টানে কেউ মজুর, কেউ কৃষক, কেউ মৌমাছির চাক ভাঙছে। বহুরূপী আর কোন পেশা নয়।তার মাঝেও সময় পেলেই এক ফাকে শিল্পকে ঝালিয়ে নেওয়া। শখ আর ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই।
বহুরূপ যার সেই বহুরূপী। বাংলার এই লোকশিল্প শুধু বাংলারই নয় সাড়া দেশের এক জীবিকা ছিল। একটা সময় ছিল যখন এই বহুরূপীরা বিভিন্ন রকম সেজে ছোট ছোট গল্পের মাধ্যমে সমাজকে ফুটিয়ে তুলতো। তাতে রোজগার যথেষ্টই হতো। বিভিন্ন চরিত্রের জন্যে মানানসই পোশাক জোগাড় করে সেজেগুজে মেলায় বা বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে টাকা রোজগার।
এখন বহুরূপীদের আর সেই কদর নেই। সেলুলয়েডের যুগে বহুরূপীদের মনোরঞ্জনের জন্য আর কারও প্রয়োজন নেই। টেলিভিশন চালালেই যেখানে হাজার হাজার চ্যানেল আপনার মনোরঞ্জনের জন্যে রয়েছে। আপনিও দিব্যি সে প্রলোভনে পা দিয়ে দিব্যি ঘন্টার পর ঘন্টা ইংরেজি রোমাঞ্চ আর হিন্দি গানে মজে রয়েছেন। আর এই টানাপোড়েনেই ধুকছে বাংলার এই লোক শিল্পীরা।
একটা সময় ছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বহুরূপীদের সসম্মানে আমন্ত্রণ জানানো হত। কিন্তু সেদিন আর নেই। এখন এটা আর কোন পেশা নয়। বহুরূপী এখন নেহাতই একটা শখ। বংশ পরম্পরায় যারা বহুরূপী ছিল তারাও এই পেশা ছাড়তে বসেছে। নতুন প্রজন্মরা কেউ আসতেও চায় না।
হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার এক ঐতিহ্যময় লোকশিল্প।