অনিশ্চয়তার প্রহর গুনছেন অসমের বাঙালিরা
অসমের বাঙালিরা চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। এনআরসি তালিকায় বাদ–পড়া ১৯ লাখেরও বেশি মানুষের সঙ্গে তালিকাভুক্তরাও রয়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়। বিজেপি নেতা–মন্ত্রীদের পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। মুখে এনআরসি–বিরোধিতা করলেও, সমান্তরাল ভাবে চলছে বর্ডার পুলিশ আর ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিদেশি খেঁাজার কাজ। তবে বিদেশি বাছার জন্য সদ্য–নিযুক্তরাও বিজেপি–র শাসনে ভোগ করছেন চরম অনিশ্চয়তা।
সুপ্রিম কোর্টের তখনকার প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নির্দেশে গত বছর ৩১ আগস্ট ঘোষিত হয় অসমের এনআরসি–র পূর্ণাঙ্গ তালিকা। তার পর ব্রহ্মপুত্র দিয়ে অনেক জল বয়ে গেলেও নিয়ম মেনে ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল বিজ্ঞপ্তি জারি করেননি। এনআরসি–ছুটদের তাই জানানো হয়নি বাদ পড়ার কারণও। ফলে এনআরসি–ছুটদের নিয়ে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের বিচার–প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। আর এনআরসি ভুক্তদেরও ঝুলে রয়েছে নাগরিকত্বের স্বীকৃতি। বিজেপি নেতা–মন্ত্রীরা বলে চলেছেন, ‘ইয়ে এনআরসি ঝুটা হায়!’ মানছি না, মানব না। ১৬০০ কোটি টাকা খরচ করে বানানো তালিকার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। তাই অনিশ্চয়তা বেড়েই চলেছে।
এদিকে, এনআরসি–র ভবিষ্যৎ অথৈ জলে থাকলেও বিদেশি বাছতে ২০০টি অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনালের সদস্য ও কর্মীদের নিয়োগ–প্রক্রিয়া শেষ। তাঁদের বেতনও দিচ্ছে সরকার। কিন্তু পোস্টিং পাননি প্রায় ১৬০০ সদস্য ও কর্মী। তাঁদের চাকরি নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের দায়সারা ভাবে জানান, ‘পুরনো মামলাগুলি দ্রুত নিষ্পত্তির কাজে লাগানো হবে নবনিযুক্তদের।’ তবে এনআরসি তালিকার ভবিষ্যৎ যে অনিশ্চিত, সেটা বুঝিয়ে দেন হিমন্ত। উল্লেখ্য, তালিকা প্রকাশের পরই অসমের এনআরসি সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলাকে অন্য রাজ্যে বদলি করেছিলেন রঞ্জন গগৈ। এখন তিনিও অবসরে। চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন অসমের এনআরসি কর্মীরা। বেতনটুকুও জুটছে না তাঁদের।
এনআরসি নিয়ে বিজেপি অনীহা দেখালেও, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বাঙালিদের বিদেশি প্রমাণের চেষ্টা কিন্তু চলছে। রাজ্যের বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে প্রায় এক হাজার বন্দি রয়েছেন। মারাও গেছেন অনেকে। অন্তত তিন লাখ মানুষের বিরুদ্ধে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের মামলা চলছে। এঁদের বেশির ভাগই হিন্দু বাঙালি। বন্দিদের মধ্যেও হিন্দুরাই বেশি। অথচ তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে খামতি নেই।
এ প্রসঙ্গে অসম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাঙালি–নিধনযজ্ঞ চলছে সর্বত্র। শুধু অসম বলে নয়, গোটা দেশে একই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বিজেপি।’ তাঁর সাফ কথা, এখন প্রকাশ্যেই বাঙালি জাতিকে ঘুসপেটিয়া বা অনুপ্রবেশকারী শব্দে নিকেশ করার ষড়যন্ত্র চলছে। এনআরসি, সিএএ, এনপিআর সবই সেই ষড়যন্ত্রের অংশ।